মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান জীবননগরের সাংবাদিক আব্দুর রশিদ

বিশেষ প্রতিবেদক:-

স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও নিজের জীবনকে বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করা অকুতোভয় বীর সেনা সাংবাদিক আব্দুর রশিদ আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাননি। তাই তো আব্দুর রশিদের জীবনে শেষ আকুতি তিনি মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেখে যেতে চান।

জীবননগর পৌর শহরের দৌলৎগঞ্জের মৃত দীন মোহাম্মদের ছেলে জীবননগর বাজারের বলাকা লাইব্রেরীর মালিক সাংবাদিক আব্দুর রশিদ বলেন,আমি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মাজদিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে যোগদান করি। প্রশিক্ষন চলাকালিন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সাথে দেশের অভ্যন্তরে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে সন্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। ২০১৭ সালে আমি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আমার তালিকাভুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন করি। আবেদনের ডিজি নং-১২৩৭২০। আমি যাচাই-বাছাই কমিটিতে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন সংক্রান্তে যাবতীয় প্রমাণাদি উপস্থাপন এবং সহযোদ্ধারা সাক্ষ্যদান করার পরও রহস্যজনক কারণে আমার নাম যাচাই-বাছাই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

আব্দুর রশিদ আরো বলেন,তৎকালীন সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক ৮ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুর ও ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। তবে আমার নামে কোন আর্মস ইস্যু ছিল না। এখন যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের সাথেই যুদ্ধ করে আমার নামটি রহস্যজনক কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আজও তালিকাভুক্ত হয়নি।

বয়সের ভারে এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন সাংবাদিক আব্দুর রশিদ। তারপরও হাল ছাড়ছেন না। মৃত্যুর আগে শুধু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার আশায় ঘুরছেন বিভিন্ন দপ্তরে। এরই মধ্যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও গিয়েছেন। মৃত্যুর আগে আদৌও স্বীকৃতি মিলবে কিনা এটাই এখন তার প্রশ্ন?

সাংবাদিক আব্দুর রশিদ প্রকৃতপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তৎকালিন সময়ে তিনি রনাঙ্গণে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের স্বপক্ষে জীবননগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সাইদুর রহমান,নিজাম উদ্দিনসহ আরো অনেকে যাচাই-বাছাই কমিটিতে সাক্ষ্য দিলেও তিনি আজও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাননি।

সাংবাদিক আব্দুর রশিদের আক্ষেপ করে বলেন,মুক্তিযোদ্ধা কালিন সময়ে যারা মুক্তিযোদ্ধা ভাত রান্না করে দিতেন কিংবা অন্য কোন ভাবে সহযোগীতা দিয়েছেন তারা আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি নিয়ে সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। আর আমরা জীবন বাজী রেখে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আজও স্বীকৃতিটুকু মেলেনি। আমার কোন ভাতা কিংবা সুযোগ সুবিধার দরকার নেই। আমি শুধু মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু চাই। এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া।

 

করে। আমরা যারা এক সাথে যুদ্ধ করেছি তাদের মধ্যে নুরুল হক ফকির, হারুনুর রশিদসহ অনেকেরই নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শুধু আমারটা হয়নি।

মহেশপুর উপজেলা সেঁজিয়া গ্রামের নুর ইসলাম তার মোবাইল ফোন-০১৯৩৯৯৮৫৯৬৮৪ নম্বরে জানান,মুক্তিযোদ্ধাকালিন সময়ে সাংবাদিক আব্দুর রশিদ,নিজাম উদ্দিন,রফিক ও সাইদুর রহমান আমার বাড়ীতে থেকে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। আমরা তাদেরকে নানা ভাবে সহযোগীতা করেছিলাম।

জীবননগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সাইদুর রহমান মাস্টার বলেন,সাংবাদিক আব্দুর রশিদ প্রকৃতপক্ষেই একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা প্রথম থেকেই তাকে বার বার আবেদন করতে বলেছিলাম। কিন্তু সে সময় তিনি আমাদের কথায় গুরুত্ব না দেয়ায় এখন জটিলতা শুরু হয়েছে। আবার আমরা যখন সুপারিশ করেছিলাম,তখন থেকেই নানা জটিলতায় তার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি আটকে যায়। এখন তো সরকারী ভাবেই ঘোষনা দেয়া হয়েছে,নতুন করে আর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে না।####

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *