আব্দুল্লাহ আল মামুন,বিশেষ প্রতিবেদক;-
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোলদাড়ী জামে মসজিদটি বৃহত্তর কুষ্টিয়ার, চুয়াডাঙ্গা,মেহেরপুর প্রথম মসজিদ হিসাবে পরিচিত। হযরত খাইরুল বাসার ওমজ (রহ.) ইসলাম প্রচারে চুয়াডাঙ্গা জেলায় এসে খুব সম্ভবত ১০০০ সালের দিকে ঘোলদাড়ী গ্রামে মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে শোনা যায়। ইতিহাসবিদদের মতে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের অনেক আগে ঘোলদাড়ি মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসাবে আজও দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রথম সহস্রাব্দের কোন এক সময় হযরত খাইরুল বাসার ওমজ (রহ.) ঘোলদাড়ি গ্রামে স্থায়ীভাবে আস্তানা গাড়েন। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার-প্রসারের কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি গ্রামে মসজিদ নির্মাণ করেন। তার মৃত্যুর পর মসজিদ প্রাঙ্গণেই তাকে সমাহিত করা হয়।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে ঘোলদাড়ী জামে মসজিদ সংলগ্ন লোকালয়ে আগুন লাগলে সমস্ত গ্রাম আগুনে ভস্মীভূত হয়। গ্রামের লোকজন অন্যত্র সরে গেলে মসজিদটি গভীর জঙ্গলে ঢেকে যায়। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় মসজিদটি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মকবুলার রহমান নিজ উদ্যোগে জঙ্গল পরিষ্কার করিয়ে ধ্বংসপ্রায় মসজিদটি নামাজ আদায়যোগ্য করেন। পরে সরকারি অনুদানে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। এসময় ঘোলদাড়ী গ্রামের মৃত আ. কাদেরের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী মসজিদের নামে ৮৮ শতক জমি ওয়াকফ করে দেন।
পাইকপাড়া গ্রামের গাজির উদ্দীন অবশ্য জানান, এ মসজিদের প্রকৃত জমির পরিমাণ ১৪১ বিঘা। কিন্তু ঘোলদাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের মিয়া মসজিদের প্রায় সব জমি দখল করে রাখেন। আব্দুল কাদেরের মৃতের পরে তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক গত জরিপে দখলদার সূত্রে তার নামে জমির দলিল হয়ে যায়। এরপর আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী ৮৮ শতক জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেন।
বছর তিনের আগে থেকে এলাকাবাসী পুনরায় সংস্কার কাজ শুরু করেন। একাধিকবার সংস্কারের ফলে অসাধারণ নির্মাণশৈলীর মসজিদটির ক্ষয়ে যাওয়া দেওয়ালগুলো সংস্কার এবং সামনের অংশ বর্ধিত করায় এর প্রাচীন রূপ বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হয়। তাছাড়া মসজিদের চারপাশে গাছপালা বড় হয়ে যাওয়ায় এক নজরে পুরো মসজিদটি নজরে আসে না।মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট হওয়ায় এর স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন অসাধারণ। এই মসজিদের চার কোণে থামের উপর ৪ টি ছোট মিনার রয়েছে। দুই পাশে দুটি দরজা রয়েছে, আর দক্ষিণ দিকে মসজিদে একটি জানালা আছে। মসজিদ গাথুনির জন্য পাতলা ইট ও টালি সাথে ব্যবহার করা হয়েছে চুন সুড়কি। মেহরাবে ৬টি কুঠোরি আছে। মসজিদের ভেতরের দেওয়ালে আঁকা আছে নানা ধরনের লতাপাতা ও ফুলের কারু কাজ, অবাক হলেও সত্য যে মসজিদের গাঁথুনির সময় চুন সুড়কির সাথে মুসরির ডালও নাকি মেশানো হয়ে ছিল। মসজিদের শিলালিপি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। তারপর স্থাপত্য ও নির্মাণ শৈলী দেখে অনুমান করা যায় মসজিদটি ১০০০ সালের দিকে তৈরি করা হয়েছিল। মসজিদের ভিতরে বর্তমানে ২ কাতার ও বাইরে ৩ কাতার করে নামায আদায় করেন মুসল্লিরা।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাস গবেষকের কাছে ঘোলদাড়ি জামে মসজিদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদটির নির্মাণ শৈলি দেখে মনে হয় ইকতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলা বিজয়ের আগে নির্মাণ করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কারণে মসজিদটি হারিয়ে যাবে। আর চুয়াডাঙ্গার ইতিহাস থেকে একটি নিদর্শন বিলুপ্তি হবে। কর্তৃপক্ষ সব সময় মসজিদটির ব্যাপারে উদাসিনাতা দেখায়।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ঘোলদাড়ি মসজিদটি এলাকায় হাজার বছরের একটি পুরাতন মসজিদ। মসজিদটি শুধুমাত্র প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর অধিগ্রহণ করে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে মসজিদটির হাজার বছরের ইতিহাস জানতে পারবে দেশবাসী এবং সেই সাথে এখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন এলাকা। সে ব্যাপারে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।