বিশেষ প্রতিবেদক:-
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে বিয়ের দিন না আসায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্ত অনুযায়ে কনের বাবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন বরের পিতা। সালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরের পিতার দেয়া ক্ষতি পূরণের দুই লক্ষ টাকা স্থানীয় চেয়ারম্যান এস এম জাকারিয়া আলমের মাধ্যমে কনের বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়। তবে কনের বাবা প্রাপ্ত টাকা গ্রহণ না করে গ্রামের অসহায় বা দুঃস্থ পরিবারের কোনো বিবাহ উপযুক্ত মেয়ের বিয়েতে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই উদ্দেশে তিনি টাকাগুলো চেয়ারম্যানের কাছেই আমানত হিসেবে রেখে দিয়েছেন।
অভিযুক্ত বর হুসাইন বর্তমানে বরিশাল লেবুখালী সেনানিবাসে কর্মরত আছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ওমর ফারুকের ছেলে। কনের মামা বলেন, দুই পরিবারের দেখাশোনার পরই ছেলে ও তার পরিবারের সিদ্ধান্তে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। এর দু–দিন আগে ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা মেয়েকে নাকফুল পরিয়ে বাগদান সম্পন্ন করে গেছেন। কথা পাকাপাকির পর কনের বাবা তার শেষ সম্বল ২টি গাভী বিক্রি করে আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। মেয়ের সুখের জন্য ছেলের দাবিকৃত এক সেট গয়না কেনেন এবং বরের জন্য একটা পালসার মোটরসাইকেল কেনারও প্রস্তুতি নেন। সমস্ত আয়োজন করে বিয়ের দিন বর পক্ষের অপেক্ষায় ছিল কনের পরিবার। কিন্তু সারাদিন পার হলেও আসেননি বর ও বরপক্ষের কেউ।
পারকৃষ্ণপুর–মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাকারিয়া আলম বলেন, এ ঘটনার দু–দিন পর আমার ব্যক্তিগত অফিসে উভয়পক্ষের পরিবারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশ বৈঠকে বসা হয়। সালিশে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কনের বাবার ক্ষতিপূরণ বাবদ বরকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণের টাকা কনের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, মেয়ের বাবা ক্ষতিপূরণের টাকা আমানত হিসেবে রেখেছেন। কোনো গরিব পরিবারের মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি টাকাটা খরচ করতে চান। এর মাধ্যমে কনের বাবা বিশাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
কনের বাবা ছদ্দনাম (জাহাঙ্গীর আলম) তার নাম পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ে না করায় আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমার মেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে আমার তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মর্যাদাহানির হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক। যা কখনো টাকা দিয়ে ক্ষতি পোষানো সম্ভব না। তাই আমি ওই টাকা আমার খরচ করতে চাই না। আমি তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য এই টাকা আমি গ্রহণ করেছি। আমি চাইনা আমার মতো আর কোনো পিতা এভাবে সন্মান হানী হোক।
আর আমি জরিমানার দুই লক্ষ টাকা গ্রামের অসহায় কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে দিতে চাই। যাতে তারা তাদের কন্যাকে বিয়ে দিতে পারে।
এ কারণে টাকা আমানত হিসেবে পারকৃষ্ণপুর–মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলমের কাছেই রেখে দিয়েছি।