জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসিন আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তরা নৌকা প্রতিকে মাঠ চষে বেড়ালেও বাঁধা,হুমকি ধামকী ,স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিক রাতের আধারে ছিড়ে ফেলাসহ নানান অভিযোগ নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ও কর্মি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আর যতই দিন যাচ্ছে,ততই নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে।
প্রতিদিনই প্রায় নৌকা প্রতিকের কর্মি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ নিয়ে থানা ও নির্বাচন অফিসের হাজির হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মিদের ওপর হামলা-হুমকির অভিযোগ প্রথমে মনোহরপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু হলেও বর্তমানে তা প্রতিটি ইউনিয়নেই শুরু হয়েছে। এতে দিন যত ঘনিয়ে আসছে,ততই নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কা বাড়ছে প্রার্থী ও সাধারন ভোটারদের মাঝে।
জীবননগর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘোষনার সাথে সাথে মাঠে নামে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কিন্তু প্রতিক বরাদ্দের পর পরই সবগুলি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসিন দলের নেতাকর্মিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ করতে দিচ্ছে না। গণসংযোগ কালে বাঁধা প্রদান,হামলা এবং সর্বশেষ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে। মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কামরুল আনারস প্রতিকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে সর্ব প্রথম নৌকা প্রতিকের কর্মি-সমর্থকদের দ্বারা বাঁধা ও হামলার শিকার হন। এ ঘটনার দু’দিনের মাথায় হাসাদহ ইউনিয়নে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুল আলমের প্রচার গাড়ী ভাংচুর এবং প্রচার কাজে থাকা দু’যুবককে মারপিট করে আহত করা হয়। এ ইউনিয়ন অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহরাব হোসেনের অভিযোগ তার কর্মি সমর্থকদেরকে নৌকা কর্মি সমর্থকেরা নানা ভাবে হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে। বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাব উদ্দিন,রাজা মালিতা ও মাও.হাফিজুর রহমানের অভিযোগ নৌকা প্রতিকের কর্মি সমর্থকেরা শুক্রবার গভীর রাতে সুটিয়া গ্রামের সমস্ত পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলেছে এবং অনেক স্থানের পোস্টার তারা পুঁড়িয়ে দিয়েছে। স্বতন্ত্র্র প্রার্থী রাজা মালিতার দাবী সুটিয়া গ্রামের ক্ষমতাসিন দলের সদস্য শাহরিয়ার,ইসমাইল খন্দকার ও জামালসহ বেশী কিছু লোক রাতের আধারে তার পোষ্টার ছিড়েছে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
অপরদিকে উথলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী আব্দুল হান্নানের কর্মি-সমর্থক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতিকের সাংবাদিক আফজালুর রহমান ধীরুর কর্মি-সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তো লেগেই আছে। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধার সম্পাদক মোবারক সোহেল আহমেদ প্রদীপের পেয়ারা বাগানের একটি টিন সেড ঘরে আগুনের সৃষ্টি হয়। সেই আগুনে ঘরের সমস্ত মালামাল পুড়ে গিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায়ও সন্দেহের তীর স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মি-সমর্থকদের দিকে উল্লেখ করে থানায় সাধারন ডাইরি করা হয়েছে। অন্যদিকে কয়েক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দু’জন কর্মি সমর্থকের দোকান ঘরে রাতের বেলা কে বা কারা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ভস্মিভুত করে। সেই অভিযোগের তীরও ছিল নৌকা প্রার্থীর কর্মি-সমর্থকদের দিকে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মাও. হাফিজুর রহমান বলেন,আমরা প্রথম থেকেই নির্বাচনী মাঠে ক্ষমতাসিন দলের নেতাকর্মিদের হুমকি ধামকির শিকার হচ্ছি। শুক্রবার নৌকা প্রতিকের কর্মি মিজানুর নামের এক যুবক তার দলবল নিয়ে আমার প্রচার মাইক বাঁধা প্রদান করেন।
কিন্তু ক্ষমতাসিন দলের নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন,স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে সুবিধা নিতেই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। ক্ষমতাসিন দলের নেতাকর্মিদের দাবী বিধি মোতাবেক গণসংযোগ করছেন। কারো পোষ্টার নষ্ট করেনি এবং হুমকি ধামকী দেয়নি।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেক বলেন,যে সব ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে সব ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পরবর্তীতে কোন ঘটনার যেন পুণরায় না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশ সজাগ আছে। তবে সকল প্রার্থীদের নিকট আমাদের প্রত্যাশা কারো কোন কর্মি সমর্থক যেন কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি না করেন। সে ব্যাপারে প্রার্থীরা তাদের কর্মি সমর্থককে নির্দেশনা দিবেন।
জীবননগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মেজর আহমেদ বলেন,প্রতিটি ঘটনার ব্যাপারে আমরা পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। সুটিয়া গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।