বিশেষ প্রতিনিধি:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় রেকর্ড পরিমান জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে চলতি বছর। ভুট্টা চাষে পাল্টে গেছে অনেক কৃষকের ভাগ্য। বদলে গেছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। এক সময় যে জমিতে শুধেই ইরি-বোরো ও আমন চাষের পাশাপাশি প্রচলিত কিছু শাক-সবজি চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ভুট্টা চাষ করে কৃষকরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। ভুট্টা চাষের সাফল্য কৃষকদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। ফলন ভাল আর দামও ভাল হওয়ায় কৃষকদের কাছে ভুট্টা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় প্রতিবছরই ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়ছেন উপজেলার কৃষকরা। চলতি মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমান জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। অন্যদিকে যে কোন বছরের তুলনায় এবছর ভু্ট্টার দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কৃষকরা জানান, গত বছর ভূট্টার দাম বেশি পাওয়ায় উপজেলার কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা চাষের দিকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছেন।
জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের ভুট্টা চাষী আব্দার হোসেন বলেন,১৭ বছর আগে এ এলাকায় প্রথম তিনি ভুট্টা চাষ শুরু করেন। ওই বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ৩ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদিত ভুট্টা প্রায় ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। সে সময় অধিক পরিমান লাভ হওয়ায় পরের বছর তিনি জমির পরিমান আরও বাড়িয়ে দেন। এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ৫ বিঘা জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা তিনি দু’লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি জানান, কার্তিকের শেষে ভালভাবে জমি কর্তন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে ভুট্টা চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। জমিতে বীজ বপনের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাথায় চারা গজায়। ৬ মাসের মাথায় জমি থেকে গাছ কেটে ভুট্টা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিবিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ মন ভুট্টা উৎপাদিত হয়। জমি তৈরি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি হয়ে থাকে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয় ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা।
উথলী গ্রামের ভুট্টা চাষী সামাদুল জানান, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে ভূট্টা চাষ করে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। সে আসায় এবার সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে ভূট্টা চাষ করেছি। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ভুট্টা এই জেলায় অর্থকারী ফসল। এর সাথে প্রায় তিন লাখ চাষি জড়িত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে কৃষকরা যদি ভুট্টা সংরক্ষণ করতে পারতো তা হলে আরও বেশি লাভবান হতো।