জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলেও নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বাড়তে শুরু করেছে। নির্বাচনের একদিনের মাথায় বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় পৃর্থক পৃর্থক ভাবে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। একটি ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে এবং সেই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জীবননগর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গত ১৬ মার্চ শান্তিপুর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের আগে কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নির্বাচনের পর পরই বিভিন্ন স্থানে বিজয়ী প্রার্থীদের কর্মি সমর্থকদের সাথে পরাজিত প্রার্থীর কর্মি সমর্থকদের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সহিংস ঘটনার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসির মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনার পর পর পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নির্বাচনী কেন্দ্র একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল ভাংচুর করে। পরে বিজয়ী প্রার্থীর বাড়ীতে হামলা চালিয়ে বিজয়ী প্রার্থী চামেলী বেগমকে আহত এবং সেখানে উপস্থিত এক সাংবাদিকের মোটর সাইকেল ভাংচুর করে।
এদিকে বাঁকা ইউনিয়নের সুটিয়া গ্রামে শুক্রবার জুম্মার নামাজের শুরুতেই নির্বাচনোত্তর নৌকার সমর্থকদের সাথে পরাজিত প্রার্থীদের সমর্থকদের হাতাহাতি শুরু হয়। এতে শারীরিক ভাবে আওয়ামীলীগের হারুন ও ফয়েজ নামের দু’ব্যক্তি লাঞ্চিত হন। এ ঘটনায় থানা পুলিশ ৩ জনকে আটক করেন। এ ঘটনার জের ধরে জুম্মার নামাজ শেষে জামায়াতে ইসলামী নেতা মফিজুর রহমান ও ইউনুস আলীর বাড়ীতে বহিরাগত ২০-২৫ যুবক হামলা চালিয়ে বাড়ীর ঘরে প্রবেশ করে নামীদামী আসবাবপত্র ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এসময় হামলাকারিরা নগদ লক্ষাধিক টাকা এবং ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সুটিয়া গ্রামের সাধারন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
একই ইউনিয়নের পাথিলা গ্রামে বিজয়ী প্রার্থীর পিতার হাতে পরাজিত প্রার্থীর তুহিন(২৬) নামের এক কর্মির ওপর হামলা চালিয়ে তার হাত ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে রায়পুর ইউনিয়নের বালিহুদা গ্রামের পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকের হাতে একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে বিজয়ী প্রার্থীর এক মহিলা সমর্থকসহ তিনজন আহত হন। অপরদিকে উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নে নির্বাচনোত্তর শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’দফায় বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর কর্মি সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে মনোহরপুর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে দু’জন প্রার্থী সমান-সমান ভোট পাওয়ায় তাদের ফলাফল স্থগিত করে সেখানে পুণ:নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি ইউনিয়নের সচেতন মহলের মধ্যে আশঙ্কা বিরাজ করছে যে,আরো সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে। তবে পুলিশ প্রতিটি ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌছে তা নিয়ন্ত্রণ করায় কোন স্থানে একই ঘটনা এখনও পর্যন্ত একাধিক বার ঘটার খবর পাওয়া যায়নি।
বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদ্য পুণ:নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন,সুটিয়া গ্রামের মসজিদের ভিতরে দু’জনকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনা শুনে আমি দ্রুত সেখানে হাজির হই এবং উভয়পক্ষকে শান্ত করি। ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছেন। তবে বিবাদমান বিরোধ দ্রুতই উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে নিস্পত্তি করে ফেলব ইনশাল্লাহ।
জীবননগর অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খারেক বলেন,নির্বাচনোত্তর প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ শক্ত হাতে মোকাবেলা করছেন এবং সবগুলো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত শুধু মাত্র সুটিয়ার ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সবাইকে আইন হাতে তুলে না নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কোন ঘটনা ঘটলে পুলিশকে তাৎক্ষণিক ভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।