বিশেষ প্রতিনিধি:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা গত বছরের লোকসান পুষিয়ে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। আমের বাম্পার ফলন নিতে চাষিরা সারা বছর বাগান পরিচর্যা,পোকা মাকড় মুক্ত করতে সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করে আসছেন। জীবননগর উপজেলায় প্রাকৃতি দূর্যোগ এখনও হানা না দেয়ায় প্রতিটি বাগানের গাছে গাছে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। চলতি মওসুমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলার হিম সাগর,ল্যাংড়া আমের পাশাপাশি আম্রপালি আমের দেশ ব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামী ১৫ মে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে আম বাজারজাত করার নির্দেশনা পেয়েছেন। চলতি মওসুমে শেষ পর্যন্ত কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে না পড়লে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাগানে আমের অধিক ফলনের আশা করা হচ্ছে।
আম চাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, এ বছর উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে ৬১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত হাজার ৯৯৫ মেট্রিক টন। বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায সরবাহ করা যাবে।
জীবননগর বাজারের পাইকারি আম ব্যবসাযী বশির উদ্দিন বলেন, গত বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কম হয়েছিল। অন্যদিকে বাজারে দামও কম ছিল। আমরা যারা অগ্রিম আমের বাগান কিনেছিলাম তাদের সকলের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল । এবার প্রতিটি বাগানের গাছে যে হারে আম ঝুলছে, তা দেখে বেশ খুশি চাষিরা। শেষ পর্যন্ত এমন স্বাভাবিক অবস্থা অব্যাহত থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জীবননগরের হিমসাগর ও আম্রপালি আমের চাহিদা বেশী।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জীবননগর মাটি ও আবহাওয়া ভাল হওয়ায় এবং চাষিরা বিষ মুক্ত আম উৎপাদন করার কারণে গত কয়েক বছর ধরে উপজেলায় উৎপাদিত আম হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, মল্লিকা, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও খিরসাপাতিসহ অন্যান্য জাতের আমের ব্যাপক উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার আমা বাজারে সরবরাহ করা হয় জীবননগরের আম।
জীবননগর পৌর এলাকার দৌলৎগঞ্জের আম চাষি মুন্সী আব্দুস সবুর খোকন বলেন, চলতি মওসুমে আমার ৬ একর জমিতে আমের আবাদ রয়েছে। এবার প্রতিটি গাছে গাছে ব্যাপক হারে আম ধরেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আম দ্রুত বড় হচ্ছে।এবার বাম্পার ফলন হয়েছে, আশা করছি গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো।
জীবননগর বাজারের পাইকারী আম ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন বলেন,এ বছর যে হারে গাছে আম এসেছে গত দশ বছরেও এমন আম ধরতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে আমের মুকুল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত আবহাওয়াও অনুকুলে রয়েছে। আমি এবার ১০০ বিঘার মত বাগান কিনেছি। আশা করছি ভাল ফলন ও দাম পাবো। জীবননগর উপজেলার আমের বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে বিষ মুক্ত,সুস্বাদু ও আকারে বড়। বিগত বছরগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে। এ বছর আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জীবননগর বাজারের বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী শামীম ফেরদৌস বলেন,আমাদের অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আমাদের এলাকার হিম সাগর ও ল্যাংড়া আম সুমিষ্ট ও সুস্বাদু। তিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন,উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন যদি এলাকার কৃষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ,দেখভাল ও অন্যান্য সহযোগীতা দিতেন তাহলে আমাদের অঞ্চলের আম বিদেশে সরবরাহ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতো।
উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। সেই পরিমাণ গুটি ধরেছে। মাঝে প্রচন্ড গরমে কিছু গুটি ঝরে গেছে। বর্তমানে গুটি থেকে আমের আকার বড় হয়েছে। তুলনামূলক এখন কম ঝরছে। এজন্য এবার বেশি উৎপাদনের আশা করছি। চলতি মওসুমে সাত হাজার ৯৯৫ হাজার মেট্রিক টন আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
গড়ে প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা করে হলে প্রায় ৪০ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে। বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদন এবং রপ্তানির জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জেলার চাহিদা পুরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আম সরবরাহ করা হবে। আগামী ১৫ মে থেকে আম বিক্রি ও বাজারজাতকরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে কেউ আম বাজারজাত করার চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যারা রাসায়নিক পদ্ধতিতে অপরিপক্ক আম পাকিয়ে বাজারজাতের চেষ্টা করবে তাদেরকে বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।