বিশেষ প্রতিনিধি:-
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃত পাননি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন। মুক্তিযোদ্ধাকালীন সময়ে তোফাজ্জেল হোসেনের বসবাস ছিল ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে। তিনি পাইকপাড়ার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রোগে শোকে ও বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। তিনি এখন পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বয়স আর অভাব তাকে জেঁকে বসলেও স্মৃতিশক্তি লোপ পায়নি একটুও। বললেন জীবনের ফেলে আসা অনেক অতীত স্মৃতির কথা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে যেন বড় অসহায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ভবানীপুর,শৈলকুপা ও ভারতে রানাঘাট ইয়ুথ ক্যাম্পেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। ৮ নং সেক্টর কমান্ডার ম.আ.মঞ্জুর নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা শেষে ঝিনাইদহ মিলিশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র সমার্পণ করি। তার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক ডিজিআই নং-১৫২৩১০ তাং-১৯-০৬-২০১৪ এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জাতীয় তালিকা নং-১৩৪ হলেও বার বারই মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক যাচাই বাছাই জটিলতার কারণে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে এখনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। তিনি বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়ার কারণে কোন কর্ম করতে পারেন না। সাত মেয়ে আর এক ছেলে সন্তানের মধ্যে সবাইকে বিয়ে সাদি দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে গার্মেন্টস কর্মি আলমগীর হোসেনই তার একমাত্র ভরসাস্থল।
মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন,দেশ মাতৃকার টানে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলাম। স্বপ্ন ছিল দেশকে স্বাধীন করব। সে স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিলেও আমাকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়। অভাব-অনটন আর রোগ-শোক আজ আমার নিত্যসঙ্গী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অমর হয়ে আছেন। আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এমন অবহেলা,দু:খ-কষ্ট সহ্য করতেন না। আমি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাইনি। বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত টাকা পয়সা কম খরচ করেনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময়ও আবেদন করেছি। তবে এতদিনেও ভাল মন্দ কিছু জানা যায়নি। মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি পাবো কিনা তাও বলা যাচ্ছে না। তবে সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই হলে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাবো বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন,মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ভাতা পাবার বিষয়টি বড় করে দেখছি না,জীবনের শেষপ্রান্তে হলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেখে যেতে চাই। আমি আশা করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসুরি হিসাবে আস্থার প্রতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। আজ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনাহারে-অর্ধাহারে বিনা চিকিৎসায়,বাসস্থানহীন অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। অন্যদিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বুক ফুলিয়ে সব কিছুই ভোগ করছেন।
তোফাজ্জেল হোসেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নানা কারণে আজও তার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। তাই মারা যাওয়ার আগে তিনি নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি চান। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অসহায়-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন ও তার পরিবার।
মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেনের নাতি ছেলে সাংবাদিক তাহসানুর রহমান শাহাজামাল বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের প্রাণের দাবি আমার নানার মুত্যুর আগে তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তার জীবনের শেষ ইচ্ছাটুকু পুরণ করেন।
শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: গোলাম রইছ বলেন, তোফাজ্জেল হোসেন মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর, যুদ্ধকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।