জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর এলাকার চোরপোতা তেতুলিয়ায় একটি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে হতদরিদ্র পরিবারের বাড়ীর সামনে রাস্তার জমিতে প্রাচীর নির্মানের অভিযোগ উঠেছে। প্রাচীর নির্মানের ফলে হতদরিদ্র পরিবারটি প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভিযুক্ত পরিবারের দাবী তাদের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য রাস্তার জমি চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তারা তাদের নিজস্ব জমিতেই প্রাচীর নির্মান করেছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ পাওয়ার পরও প্রাচীর অপসারন করা হয়নি। ঘটনাটি নিয়ে গ্রামের সাধারন মানুষের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ কাজ করলেও অভিযুক্ত প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
জীবননগর পৌর এলাকার চোরপোতা তেতুলিয়ার মৃত ইরাজ বিশ্বাসের ছেলে আবু বাক্কা বলেন,আমি ক্রয় সুত্রে ৫ শতক জমিতে বাড়ী ঘর নির্মান করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। এই অবস্থায় আমার প্রতিবেশী মৃত হাজী শহীদ বিশ্বাসের ছেলে প্রভাবশালী হাজী রশিদ,শফিক,মফিজ,রফিক ও হাফিজ আমার নিকট দাবী করে যে,মফিজের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য এক শতক জমি রাস্তার জন্য ছেড়ে দিতে হবে। বর্তমানে মফিজের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য পৌরসভার পাকা রাস্তা রয়েছে। অথচ তার বাড়ীতে সহজে যাওয়ার জন্য আমার ৫ শতক জমি থেকে তাদেরকে এক শতক জমি দিতে হবে। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে শায়েস্তা করার জন্য রাস্তার নামে রেকর্ডকৃত জমিতে প্রাচীর নির্মান করে আমার পরিবারকে এক প্রকার অবরুদ্ধ করে ফেলে।
এ অবস্থায় আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। একপর্যায়ে আমি ঘটনাটি নিয়ে পৌরসভায় মেয়র মহোদয়ের দ্বারস্থ হলে মেয়র মহোদয় তাদেরকে রাস্তার জমি অবমুক্ত করে দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রতিপক্ষরা মফিজ ও তার ভাইয়েরা তা অমান্য করে। পরে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দ্বারস্থ হই। তিনিও উভয়পক্ষকে ডেকে লিখিত ভাবে প্রতিপক্ষদেরকে আদশে দেন যে,আমাকে তারা কোন ভাবেই অবাধ যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করবে না। রাস্তা বন্ধ করা গণউপদ্রুব এবং দন্ডণীয় অপরাধ। তারপরও তারা প্রাচীর অপসারন না করে আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমি বাড়ীতে বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।
সরজিমে ভুক্তভোগী আবু বাক্কার বাড়ীর সামনে রাস্তায় প্রাচীর দেয়া দেখা যায়। গ্রামের একাধিক মানুষের দাবী তারা জন্মের পর থেকে দেখে আসছেন বিরোধপুর্ণ জমির পরিমান রাস্তার উভয় দিক মিলে ৮ শতক। যা উভয় দিকে ৪ শতক করে রাস্তার জন্য এবং রাস্তার জমি হিসাবেই জেনে আসছেন। আরএস খতিয়ান নং-১৮৭/ রেকর্ডে উক্ত জমি পথ হিসাবে এখনও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আবু বাক্কার সাথে দ্বন্দ্বের কারণে তার কাছে জমি দাবী করে না পেয়ে মফিজরা কয় ভাই মিলে রাস্তার জমিতে প্রাচীর দিয়ে বাক্কার পরিবারকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। যা গ্রামবাসির কাছে অমানবিক।
অভিযুক্ত মফিজ বলেন,বাক্কার কাছে আমরা এক শতক,দু’শতক জমি চাইনি। আমার বাড়ীতে সোজা রাস্তা করার জন্য দু’ফুট জমি চেয়েছিলাম। বাক্কা সেই জমিটুকু আমাকে দিতে পারিনি, তাহলে আমরা কেন তাকে আমাদের জমি দিয়ে যাতায়াত করতে দেব? আমরা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিয়েছি। তারপরও তাদেরকে যাতায়াতের জন্য একটু গলি রাস্তা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমারা প্রাচীর দিয়ে যে জমি ঘিরেছি তা সরকারী ম্যাপের রাস্তা নয়,আমাদের জমিতেই আমরা প্রাচীর দিয়েছি।
এদিকে বিরোধপুর্ণ জমি নিয়ে উভয়পক্ষকে গণশুনানি করা জীবননগর উপজেলার সাবেক ইউএনও মো: রোকনুজ্জামানের লিখিত প্রতিবেদনে দেখা যায়,ভুক্তভোগী আবু বাক্কাকে কোন ভাবেই তার জমিতে অবাধ যাতায়াতের ব্যাপারে প্রতিবন্দ্বীকতা সৃষ্টি না করতে এবং চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা গণউপদ্রুব এবং দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু প্রতিপক্ষ মফিজ ও তার অন্য ভাইয়েরা তা অমান্য করে সরকারী রাস্তার জমিতে প্রাচীর নির্মান করে আবু বাক্কা ও পরিবারের সদস্যদের অবাধ চলাচলে প্রতিবন্দ্বীকতা সৃষ্টি করছেন।
জীবননগর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন,উভয়পক্ষকে পৌরসভায় ডেকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রাচীর অপসারনের নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু কি কারণে এখনও প্রাচীর অপসারন করা হয়নি,তা আমার জানা নেই। কারো বসতি বাড়ীর সামনে প্রাচীর নির্মান করে প্রতিবন্দ্বীকতা সৃষ্টি করা অমানবিক। আর যদি তা সরকারী রাস্তার জমি হয়,তাহলে তা বেআইনি।