জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের শাহাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ফারুক হোসেন ও প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিয়ে নিয়োগ না পাওয়ায় বিদ্যালয়ের মূল ফটকে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তালা লাগিয়ে দেয় চাকুরী প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। প্রায় ঘন্টা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকার পর স্থানীয় চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে স্কুলের গেটের তালা খুলে দেয় উত্তেজিত ভুক্তভোগীরা।
সরজমিনে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, আন্দুলবাড়ীয়ার শাহাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্ন কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের দপ্তরীর ছেলে এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্যের ভাইয়ের মেয়ে ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়োগ দিয়েছেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। একই সাথে আরো ৫ জন প্রার্থীর কাছ থেকেও নিয়োগের কথা বলে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান ও সভাপতি ফারুক হোসেন টাকা নিয়েছেন, কিন্তু চাকরি না দিয়ে এখন তারা টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
শাহাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বাহাউদ্দিন ও আজিম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আমাদের স্বাক্ষর জাল করেছেন। নিয়োগ বোর্ড ও নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ সর্ম্পকে কোনো কিছুই অবগত করেননি। মিটিং ছাড়াই গোপনে আগে থেকে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুক্তারের ভাইয়ের মেয়ে উর্মিকে আয়া পদে ও মুক্তার চেয়ারম্যানের সহকারী (বডিগার্ড) রকিবুল ইসলামকে অফিস সহায়ক এবং শাহপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী আনোয়ার হোসেনের ছেলে আজমিরকে পরিছন্নতা–কর্মী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভুক্তোভোগীরা বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান, সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মুক্তারকে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।এবং রোববার উভয় পক্ষ বসে বিষয়টি সমাধানের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে বসার কথা থাকলেও সভাপতি ও প্রধান সেদিন না আসলে সোমবার সকালে ভুক্তভোগীরা স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। ’
অভিভাবক শান্তি বলেন, আমার ছেলের চাকরির জন্য স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তবে আমার ছেলের চাকরি দেয়নি। বেশি টাকা দেওয়ায় অন্য জন্যকে চাকরি দিয়েছে। এজন্য আজ বিদ্যালয়েল গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলাম।
রুবেল, মেহেদী হাসান ও সেতারা বেগম বলেন, ‘পত্রিকায় গত ১০মে শাহপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে জানতে পেরে আবেদন করি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি চাকরির জন্য টাকা দিতে বলেন। টাকা দিয়েছিলাম। চুয়াডাঙ্গা ভি জে স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পরীক্ষা শেষে ওরা সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তারের দুজন ব্যক্তিকে এবং স্কুলের দপ্তরির ছেলেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা এই নিয়োগ বাতিলের দাবি করছি। এবং পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে যোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হোক।’
আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘টাকা দিয়ে চাকরি না পাওয়ায় প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা বিদ্যালয়েল গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। খবর পেয়ে আমি বিষয়টি মীমাংসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেটের তালা খুলে দিই। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বসতে চাচ্ছেন না। এ জন্য বিষয়টি সমাধান হচ্ছে না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘সভাপতিই সম্পূর্ণ বিষয়টি ডিল করেছেন। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুক হোসেন ও জীবননগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমাজদ হোসেনকে ফোন করা হলে তারা ধরেননি।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ বলেন, শাহাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে বিদ্যালয়ের গেটে তালা লাগানোর খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এটা সমাধানের জন্য একটি সময় দেওয়া হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।