বিশেষ প্রতিনিধি:
দামুড়হুদায় সর্বজনীন জাতীয় পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবহিতকরণ প্রচার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১০ টার সময় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পরিষদের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো চালু হলো সার্বজনীন পেনশন স্কিম। এই পেনশনের আওতায় সরকারি চাকরিজীবী বাদে দেশের সকল নাগরিক পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হবে। কারো বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন। আমাদের যারা সরকারি চাকুরিজীবী তারা তো পেনশন পান, কিন্তু যারা চাকরি করেন না তারা তো কোন পেনশন পান না, কাজেই এটা সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য নয়। চাকরিজীবির বাইরে যে জনগোষ্ঠী আছে তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সুবিধা দিতে এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে বাংলাদেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল শ্রেণী পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবে।সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ গ্রহণ করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক। বয়সের ক্ষেত্রেও বিশেষ বিবেচনা রাখা হয়েছে। যাদের বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি পেনশন পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর। স্কিম অনুযায়ী ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হলেই তিনি সরকার থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন, তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ৫৫ বছর বয়সে এসে স্কিমে অংশ নেন তাহলে ৬৫ বয়স বয়স থেকে তিনি পেনশন পেতে শুরু করবেন। সরকার মোট ৬টি স্কিমের কথা ঘোষণা করেছেন। তবে আপাতত চালু হয়েছে ৪ টি স্কিম। এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা।
প্রবাস: এ স্কিমটি শুধু বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য। এর মাসিক চাঁদার হার ধরা হয়েছে ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে।
প্রগতি: এই স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য। এক্ষেত্রে তিন ভাগে চাঁদার হার ভাগ করা হয়েছে। কেউ চাইলে মাসে ২ হাজার, ৩ হাজার বা ৫ হাজার টাকা করে দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
সুরক্ষা: এই স্কিমটা স্বনির্ভর ব্যক্তির জন্য। অর্থাৎ কেউ কোথাও চাকরি করছেন না কিন্তু, নিজে উপার্জন করতে পারেন, তারা সুরক্ষা স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। এর আওতায় পড়েন ফ্রিল্যান্সার, কৃষক, শ্রমিক ইত্যাদি পেশার লোকজন। এই স্কিমে চাঁদার হার ৪ রকম, মাসে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা করে।
সমতা: এই স্কিমে চাঁদার হার একটিই নির্দিষ্ট ১ হাজার টাকা। তবে এক্ষেত্রে প্রতিমাসে ব্যক্তি দেবে ৫শ টাকা আর বাকি ৫শ টাকা দেবে সরকার। মূলত দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসরত স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এই স্কিম। বর্তমানে যাদের আয় বছরে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে তারাই কেবল এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের জন্য ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানে ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল দিয়ে কয়েকটি ধাপে এতে নিবন্ধন করতে পারবেন। কেউ চাইলে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি করা যাবে। আপাতত শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে। কেউ চাইলে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন ও চাঁদা দিতে পারবেন। অনলাইন ও যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। প্রত্যেক পেনশনার তারা সবসময় তার অ্যাকাউন্ট চেক করতে পারবেন যে কত টাকা জমা আছে। পেনশনারগণ আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে কেউ যদি ৭৫ বছর বয়স পূরণ হবার আগেই মারা যান তাহলে তার নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাবেন। আর যদি পেনশনার ১০ বছর চাঁদা দেবার আগেই মারা যান তাহলে তার জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। কারো যদি পেনশনে জমাকৃত অর্থ কোন এক পর্যায়ে উত্তোলনের দরকার হয় তাহলে সেই সুযোগও রয়েছে। তার মোট জমার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ অর্থ তিনি আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু,
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদা খাতুন, দর্শনা থানার ওসি অপারেশন শফিউল আলম, দামুড়হুদা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবীব, দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই শেখ তৌহিদুর রহমান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী, কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস, কুড়ালগাছি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, দামুড়হুদা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আব্দুল লতিফ, সোনালী ব্যাংকের অফিসার মনজুরুল হাসান, অগ্রনী ব্যাংক পিএলসি ব্যাবস্থাপক মাসুদুল হক, দামুড়হুদা মডেল মসজিদের পেশ ঈমান হাফেজ মা মোঃ মামুনুর রশীদ সহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বৃন্দ, বিভিন্ন ব্যাংকের অফিসার বৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।