জীবননগর রাজানগরের আতাউর ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে লিবিয়ায় দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে নির্যাতনের শিকার সাড়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী

জীবননগর অফিস:-
লোভনীয় চাকরির কথা বলে হতদরিদ্র আতাউর রহমানকে লিবিয়ায় পাঠিয়ে তাকে সেখানে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দিয়ে নির্যাতন করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তিন আদম ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। বিদেশে মাফিয়াদের হাতে আটকে পড়া আতাউর রহমানকে(৫৫) উদ্ধার ও মানব পাচারকারী দালাল চক্রের হোতাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে  সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

লিবিয়ায় আটকেপড়া আতাউর রহমান জীবননগর পৌর এলাকার রাজনগর পাড়ার বাসিন্দা। তিনি জীবননগর বাজারের নারায়ণপুর মোড়ে সেলুন ব্যবসায়ী ছিলেন।


সংবাদ সম্মেলনে লিবিয়ায় আটকে থাকা আতাউর রহমানের স্ত্রী জোসনা খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেন,আমার স্বামী আতাউর রহমান জীবননগর বাজারে একজন সেলুন ব্যবসায়ী ছিলেন। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার রঘুনাথপুর গ্রামের রহম আলীর ছেলে মানব পাচারকারী নোয়াব আলী(৪০), জীবননগর বাজার পাড়ার তাজিম হোসেনের ছেলে শাহিন হোসেন(২৫) ও নারায়ণপুর মোড়ের আত্তাব হোসেনের ছেলে ওসমান আলী পরস্পর যোগসাজসে আমার স্বামীর পিছনে লেগে থাকে এবং ফুঁসলিয়ে বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে চার লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা বিনিময়ে ১০ অক্টোবর রাত ১০ টার দিকে আমার বাড়ি থেকে তাকে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। সেই সাথে তারা প্রতিশ্রুতি দেয় যে,সেখানে তারা আমার স্বামীকে সেলুনের কাজ দিবে। প্রতি মাসে বেতন হিসাবে বাংলাদেশ টাকায় ৫০ হাজার টাকার বেশী দিবে। কিন্তু তারা সেখানে আমার স্বামীকে কোন কাজ তো দেয়নি। অন্যদিকে সেখানে অজ্ঞাত স্থানে আটকিয়ে আরো  সাড়ে চার লাখ টাকা দাবী করছে। এর আগে কৌশলে তারা আমাদের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এ সময় আমার স্বামী লিবিয়া পুলিশের হাতে আটক হলেও তারা তা গোপন রেখে আমাদের নিকট থেকে উক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।

আমার স্বামী সেখানে এক মাস জেলও খাটে। শাহিনের বাবা তাজিম হোসেন বর্তমানে লিবিয়ায় অবস্থান করছে। বর্তমানে লিবিয়ায় আমার স্বামীকে তারা আটকিয়ে আরো সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাবী করারয় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস পাচারকারীরা পরস্পর একটি মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং আমার স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর নামে কৌশলে লিবিয়ায় নিয়ে দফায় দফায় আমাদের নিকট টাকা আদায় করছে। পাচারকারি চক্রের অন্যতম সদস্য

নোয়াব আলীর দাবী তাকে ৫০ হাজার টাকা দিলেই আমার স্বামী সেখানে জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। অন্য দিকে আমার স্বামীকে লিবিয়ায় জিম্মি করে তাকে প্রাণাশ করার ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখানে আমার স্বামীকে অত্যাচার নির্যাতন করে আমার স্বামীকে দিয়ে আমাদের ফোন করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করা হচ্ছে। সেখানে উক্ত টাকা না দিলে আমার স্বামীকে হত্যা করবে বলে আমার
স্বামী মোবাইল ফোনে কান্নাকাটি করে আমাদেরকে জানিয়েছে। আমার স্বামীর জীবন নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। আমার ছোট দুইটা মেয়ে। তাদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি আমার স্বামীকে দেশে ফেরত আনতে চাই, সেই সাথে উল্লেখিত মানব পাচারকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি ইতিমধ্যে গত ২৮ নভেম্বর জীবননগর থানায় এব্যাপারে উক্ত মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি লিখিত অভিযোগ করি। ,কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন আশ্বাস কিংবা কোন ধরনের বিচার পাইনি।
ভুক্তভোগী আতাউর রহমানের জামাতা আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে এবং আমার শ্বশুরকে নির্যাতন করে মোবাইলের মাধ্যমে তা শুনিয়ে টাকা দাবি করছে। এমতাবস্থায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করলে নোয়াব আলী আমাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখান এবং আমরা আইনের আশ্রয় নেয়াতে আমার শ্বশুরকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
জীবননগর থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।অভিযোগের ভিক্তিতে অভিযুক্তদের একজনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। সে দু’চার দিন সময় নিয়েছে।এই সময়ের মধ্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *