জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মারুফদহ গ্রামের মেয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গুড়দহ গ্রামের গৃহবধু চাঁদনীকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যার অভিযোগে ঘাতক জামাইসহ ঘটনার সাথে জড়িত সকল আসামিদেরকে গ্রেফতার ও তাদের ফাঁসির দাবীতে বৃহস্পতিবার বিকালে মারুফদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে গ্রামের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর উপস্থিত ছিলেন। নিহতের পরিবারের কাছে হত্যাকান্ডের নির্মম ঘটনা শুনে মানববন্ধনে উপস্থিত সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
মানববন্ধনে ঘাতক স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিহত চাঁদনীর নামে করা তিনটি বীমা পলিসির টাকা উত্তোলন করতেই গৃহবধু চাঁদনীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে মহেশপুর থানায় ঘাতক স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মারুফদহ গ্রামের শাহজান মন্ডলের কন্যা রিফাত জাহান চাঁদনির(২১) সাথে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার গুড়দহ বাজারপাড়ার আশরাফ আলী ওরফে বিশারতের ছেলে মশিয়ার রহমানের(২৫) গত দেড় বছর আগে বিয়ে হয়।
মশিয়ার রহমান জীবননগর হাইস্কুল মার্কেটের বিসমিল্লাহ পার্টসের সত্বাধিকারী হিসাবে পরিচিত। বিবাহের পর থেকে যৌতুকের টাকার জন্য স্বামী মশিয়ার রহমান,শ্বশুর বিশারত,শ্বাশুড়ী ফনি বেগম,বড় ননদ কাকুলি খাতুন,ছোট ননদ জলি খাতুন গৃহবধু চাঁদনীকে নানা ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিল।
চাঁদনীর বাবা-মা সাধ্যানুযায়ী জামাতা মশিয়ারের ব্যবসার জন্য মোটা অংকের টাকা পয়সা দিলেও চাঁদনীর ওপর অত্যাচার নির্যাতন কখনই থামাতে পারিনি।
সর্বশেষ তাকে ঘাতক স্বামী মশিয়ার ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ও দুই ননদ মিলে নির্মম ভাবে ১১ ডিসেম্বর গভীর রাতে হত্যা করে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে হত্যার ঘটনা তারা আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার করতে থাকে।
নিহতের বড় ভাই হাসান আলী মানববন্ধনে নির্মম ভাবে একমাত্র ছোট বোন চাঁদনী হত্যার ঘটনা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলেন,বোনের সুখের জন্য ঘাতক মশিয়ার রহমান ও তার বাবা-মা ও বোনেরা যখন যা দাবী করেছে,আমরা তা সাধ্যমত দেয়ার চেষ্টা করেছি।
তারপরও ঘাতকরা আমার বোনকে শুধুই টাকার জন্য ঘাতক মশিয়ারের বাড়ীতে ১১ ডিসেম্বর রাতে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তিনি বলেন,আমার বোনকে শারীরিক ভাবে নির্যাতনের পর তারা তা আত্মহত্যা হিসাবে প্রমান করতে বোনের দু’পায়ে,হাতে কারেন্ট শর্ট দেয়। বোনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত চিহৃ দেখা যায়। ঘাতকেরা আমার বোনকে হত্যার পর আমাদেরকে বিষয়টি না জানিয়ে গোপন রাখে।
আমরা ঘটনাটি সকাল ১১ টার দিকে ঘাতকদের এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে জানতে পারি। ঘাতক মশিয়ার আমার বোনের নামে তিনটি বীমা পলিসি খুলে আমার বোনকে হত্যার পর সেই বীমার টাকা উত্তোলন করতেই আমার বোনকে তারা পরিকল্পিত ভাবে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
মানববন্ধনে উপস্থিত থাকা রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন,ঘটনাটি নির্মম ও দু:খজনক। ঘটনা শোনা মাত্রই আমরা গুড়দহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব সহযোগীতার কথা বলিলে তিনি সহযোগীতা তো করেইনি বরং তিনি ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।
আমরা এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সিভিল সার্জন ঝিনাইদহের পাশাপাশি মহেশপুর থানা পুলিশের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করছি। সেই সকল আসামিদেরকে গ্রেফতার করারও দাবী জানাচ্ছি।
রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য আজাদ রহমান সারত বলেন,হত্যাকান্ডটি পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে সংঘটিত করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার ও ঘাতক স্বামী মশিয়ার রহমানের ফাঁসিসহ সকল আসামিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছি।
মানববন্ধনে অংশ গ্রহনকারী সকল নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর সমস্বরে ঘাতকদের ফাঁসি দাবী করেন। মানববন্ধনে কর্মসুচিতে মারুফদহ গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ,যুবক-যুবতী ও শিশু-কিশোররা অংশ গ্রহন করেন।