গঞ্জের খবর ডেস্ক: আমাদের এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শীতের দেখা মেলে বড়জোর দুমাস, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি। তাই শীতকে উপভোগ করতে হলে এই কয়েকটা দিনই সময় আমাদের হাতে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় তেই দেখা যায় একটু ঠান্ডাই আমাদের কাবু করে দিচ্ছে, শীত উপভোগ করা তো দূরের কথা, শীত গেলে বাঁচি এমন রব তুলি আমরা। গত তিনদিন ধরে কাঁপিয়ে ঠান্ডা পড়েছে বঙ্গে। বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের ইঙ্গিতও। শীত পড়ছে না বলে আমরা যেমন যুদ্ধ করি তেমনই ঠান্ডা একটু বেশি পড়লেই জুবুথুবু হয়ে বসে থাকি।
শীতকালে আমাদের শরীরের তাপমাত্রার তুলনায় পরিবেশের তাপমাত্রা কম থাকে, তাই তাপ আমাদের শরীর থেকে পরিবেশে প্রবাহিত হয়, এবং আমরা ঠান্ডা অনুভব করি। আমাদের এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা আমাদের শরীরকে শীতকালেও গরম রাখতে সাহায্য করবে। আর এর সঙ্গে শরীরচর্চা তো আছেই। শীতের ভয়ে তা বন্ধ করলে চলবে না। তাহলে দেখে নেওয়া যাক কোন খাবার গুলো হয়ে উঠতে পারে শীতের সুপারফুড-
মধু: মধুতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও আন্টি অক্সিড্যান্ট যা আমাদের ইমিউনিটি বজায় রাখে, দেহে তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে, কোল্ড ও ফ্লু এর থেকে রক্ষা করে। সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তুলসী ও আদা: শীতের সকালে তুলসী পাতা আর আদা দেওয়া চায়ের স্বাদই আলাদা। এছাড়াও আদা ও তুলসী দেহে থার্মোজেনেসিস প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে, হজমশক্তি বাড়ায়, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়, তাই শীতকালে তুলসী-আদা চা যেন বাদ না যায় প্রতিদিনের ডায়েট থেকে।
ঘি:ঘি শুনেই কি ওজন বৃদ্ধির ভয় পাচ্ছেন? তাহলে ঝেড়ে ফেলে দিন সেই ভয়, কারণ ঘি সারাবছরের সুপার ফুড। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ঘি খেলে রক্তে গুড কোলেস্টেরল তৈরি হয়,যা হার্ট কেও ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও দৈহিক তাপমাত্রা বজায় রাখা, হজমশক্তি বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা, পেশির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করে দেয়। আর তাই ঘি-এর জুড়ি মেলা ভার।
গুড়: প্রচুর আয়রন, এনার্জির উৎস ছাড়াও গুড় কিন্তু হজমশক্তিও বৃদ্ধি করে। যাঁদের ডায়াবিটিস রয়েছে তাঁরাও কিন্তু নির্ভয়ে গুড় খেতে পারেন। শীতে শরীরকে গরম রাখতে জুড়ি নেই গুড়ের।
দারুচিনি: প্রতিদিন দারুচিনি খেলে দেহে মেটাবলিজম বাড়ে। গরম জল বা রান্নায় মশলা হিসাবে যে কোনো ভাবেই খাওয়া যেতে পারে দারুচিনি।
কেশর: কেশর ও কিন্তু শীতে দেহ তাপমাত্রা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অব্যর্থ দাওয়াই। কেশর খনিজতে সমৃদ্ধ, এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম।
সিসেম বা তিল: মিনারেল ও আন্টি অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ তিলের কিন্তু অত্যন্ত ভালো ক্ষমতা রয়েছে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করার। দৈহিক তাপমাত্রা ও বজায় থাকে এতে।
গরম স্যুপ: মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ যে কোনো গরম স্যুপ কিন্তু শীতের সন্ধ্যার স্ন্যাকস হতেই পারে। এমনকী ডিনারের জন্যেও খুবই ভালো। এতে চিকেন বা সয়াবিন যোগ করলেই একটা কমপ্লিট নিউট্রিশন ব্যাংক পেয়ে যাবেন।
ড্রাই ফ্রুটস: আমন্ড, আখরোট, খেজুর ইত্যাদি দেহে তাপ উৎপাদন ছাড়াও প্রায় ৩.৫% অধিক ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ইমিউনিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কলা: কলা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা দেহে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কার্য ক্ষমতা বজায় রাখে। এই থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ই কিন্তু প্রধানত দেহে তাপমাত্রা বজায় রাখে।
ডিম: ডিম কে বলা হয় পুষ্টির পাওয়ার হাউস, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ এই খাদ্যটি একদিকে যেমন দেহ তাপমাত্রা বজায় রাখে তেমনই অন্যদিকে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেহে ইমিউনিটি রক্ষায় সাহায্য করে
হোল গ্রেন সিরিয়ালস: ফাইবার যুক্ত শস্যদানা গুলি কিন্তু দেহ তাপমাত্রা বজায় রাখতে অনবদ্য, কারণ এগুলি ডাইজেস্ট হতে বেশ বেশি সময় লাগে তাই থার্মোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
তথ্য: রাখী চট্টোপাধ্যায়, ক্লিনিক্যাল ডায়াটিশিয়ান ও ডায়াবিটিস এডুকেটর।