ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে আবারও মন্ত্রী হলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার

বিশেষ প্রতিনিধি:-

ইউপি চেয়ারম্যান থেকে মন্ত্রী। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় আবারও খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। নওগাঁ-১ আসনের এই সংসদ সদস্য আগের মেয়াদে পাঁচবছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের এ পর্যায়ে আসতে পেরুতে হয়েছে নানা বাধা-বিপত্তি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিয়ে শুরু; আর এখন তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।

১৯৮৪ সালে নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাধন চন্দ্র মজুমদার। এর মাধ্যমেই তিনি প্রথমবার জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বাদ পান। এরপর ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু দু’বারই পরাজিত হন। তবে দমে যাননি তিনি। তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। ভোটের পরীক্ষায় শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছেন নিজেকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জয়ী হয়ে সংসদে যান সাধন চন্দ্র।

পরে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন। আর সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ১০ হাজারের ভোটের ব্যবধানে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় জায়গা পান নওগাঁর এই কৃতীসন্তান। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর আবারও একই মন্ত্রণালয়ে জায়গা পেলেন তিনি।

সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৫০ সালের ১৭ জুলাই নওগাঁ জেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজুমদার ও মা মৃত সাবিত্রী বালা মজুমদার। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সাধন চন্দ্র মজুমদার অষ্টম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালে তিনি তাঁর পিতাকে হারান।

নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চৌমুহনী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এই রাজনীতিবিদ। পরে নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। চৌমুহনী কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে তিনি হাজিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, দুইবার প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দীর্ঘদিন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্যের ব্যবসা ও কন্সট্রাকশন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তিনি।

দশম জাতীয় সংসদে তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁ করনেশান হল সোসাইটি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য।

সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৭৪ সালে চন্দনা রাণী মজুমদারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার সহধর্মিনী একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী মারা যান। পরবর্তীতে তিনি আর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। তিনি চার কন্যা সন্তানের জনক। বড় কন্যা সোমা রাণী পেশায় একজন ব্যাংকার। দ্বিতীয় যমজ কন্যার একজন কাবেরী রাণী মজুমদার ব্যাংকার, আরেক কন্যা কৃষ্ণা রাণী মজুমদার পেশায় সার্জন। আর ছোট কন্যা তৃণা মজুমদার একজন প্রকৌশলী।


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *