জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মনোহরপুরে এক বৃদ্ধের গোপন পরকীয়া চলছিল একই গ্রামের অপর এক যুবকের। ওই যুবক নারী কন্ঠে বৃদ্ধের সাথে ৬ মাস ধরে চুটিয়ে পরকীয়া প্রেমের ফাঁদে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে মোবাইল ফোনে ৬ মাস ধরে কথোপকথন হলে কেউ কারো সাথে সরাসরি কোন দেখা সাক্ষাত ছিল না। যুবকের মিষ্টি মিষ্টি নারী কন্ঠে আসক্ত হয়ে পড়ে ওই বৃদ্ধ। বিয়ে আর মেলামেশার আশায় স্ত্রী -সন্তানদের গোপন করে অবাধে টাকা খরচ করতে থাকে। অবশেষে শনিবার তাদের রহস্যময় পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। ব্যাপারটি শেষ পর্যন্ত থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। টাকা ফেরত দিয়ে শেষ রক্ষা হয় নারী কন্ঠ ধারণকারি পরকীয়া প্রেমিকা সামাউল(৩৫)। ঘটনাটি
নিয়ে এলাকায় বেরসিক জনতার মাঝে রসিকতার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে মনোহরপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান,কৃষক মঈনুর মন্ডলের(৭৫) সাথে মোবাইল ফোনে একই গ্রামের সাব্দার আলী মন্ডলের ছেলে সামাউলের মিসকলের সুত্র ধরে তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। সামাউল তার আসল পরিচয় গোপন করে নারী কন্ঠে প্রেম আলাপন চালিয়ে যেতে থাকে।
সামাউলের একাজে সহযোগিতা করে একই গ্রামের মসলেম মন্ডলের ছেলে শাওন(৩০) ও বিশারতের ছেলে হাবিল(৩০)। যুবক সামাউল ও বৃদ্ধ মঈনুরের মাঝে প্রেমের সুত্র ধরে সামাউল বিভিন্ন সময় ৬০-৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই টাকা সামাউল,শাওন ও হাবিল মাঝে মধ্যেই ভাগ বাটোয়ারা করে নিতো। এদিকে বৃদ্ধ মঈনুর মন্ডল না দেখে যুবকের নারী কন্ঠে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে জমি বন্দকের টাকাসহ সাংসারিক টাকা খরচ দিন দিন সংসার বৈরাগী হয়ে পড়েন এবং
নিজেকে পরিপাটি করে রাখে। তার এমন আচরণের বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যেরকে ভাবিয়ে তোলে।
এদিকে বৃদ্ধ মঈনুর তার পরকীয়া প্রেমিকাকে বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেমিকা সামাউলের দেয়া ঠিকানা মোতাবেক আলমডাঙ্গা একাডেমী মোড়ে চলে যান। সামাউল তাকে শনিবার যেতে বললেও মঈনুর ক্লিন সেভ আর পরিপাটি পোষাকে একদিন আগে শুক্রবারই চলে যায়। কিন্তু সামাউল বাড়ীতেই রয়ে যায়। মঈনুরের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তাকে নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।
এ অবস্থায় তারা বৃদ্ধ মঈনুরকে অনুসন্ধান করতে থাকে। তার মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে জানতে পারে যে,সামাউল হকের সাথে বৃদ্ধা মঈনুরের কথা সর্বশেষ কথা হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগীতায় সামাউল হককে আটক করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। জানতে পারে সামাউল নারী কন্ঠ দিয়ে মঈনুরের সাথে কথা বলে এবং তার সাথে পরকীয়া প্রেমের নাটক করে ৬০-৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেই টাকা শাওন ও হাবিল ভাগ নিয়েছে। এমন অভিযোগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে জীবননগর থানা পুলিশ তাদেরকে থানা হেফাজতে নেয়। এদিকে ঘটনাটি নিয়ে বেরসিক জনতা নানা ভাবে আলোচনা -সমালোচনা করলেও বৃদ্ধ মঈনুরের নৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
মনোহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম রসুল বলেন,ঘটনাটি আমাদের কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছে। এমন ঘটনা আগে কখনও শুনিনি। মঈনুর মল্লিকের সাথে একই গ্রামের যুবক সামাউল মোবাইল ফোনে কথা বললেও মঈনুর কখনও খতিয়ে দেখিনি আসলে সে কার সাথে কথা বলছে। আর এই সুযোগে সামাউল নারী কন্ঠে কথা বলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। সেই টাকার একটি অংশ শাওন ও হাবিল পেয়েছে বলে জানা যায়। পরে উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে বিষয়টি আপস নিস্পত্তি করা হয়েছে।
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রশিদ বলেন,ঘটনাটি নিষ্পত্তির সময় আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি। ঘটনাটি এলাকার জন্য লজ্জার। মঈনুর প্রভাবশালী নেতার কাছের মানুষ হওয়ায় জঘন্য অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছে।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম জাবিদ হাসান বলেন,ঘটনাটি উভয়পক্ষ আপস নিস্পত্তি করায় এবং মামলা করতে আপত্তির কারণে থানা হেফাজতে থাকা সামাউল,শাওন ও হাবিলকে ছেড়ে দেয়া হয়।