বিশেষ প্রতিনিধি:-
সাংসারিক কাজের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলার গ্রামীণ জনপদ বসবাসরত মহিলারা গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগী পালন করে নিজরাই হচ্ছে স্বাবলম্বী। এরই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজলার সীমান্তবর্তী সুলতানপুর গ্রামের ২৫ জন মহিলা পরিকল্পিতভাবে ১৫০টি বাউ মুরগী পালনের পর ৪৩ দিনের মাথায় বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে। এতে করে অল্প দিনে ভাল লাভের আশায় এ জাতের মুরগী পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছ মহিলারা।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের গ্রাম সুলতানপুর। অবহলিত এ গ্রাম আধুনিকতার ছোয়ায় ক্রমাগত মানুষের জীবন ধারণের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এরই মাঝে ২০২৩ সালের গত ১৮ ডিসেম্বর পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডশনের (পিকএসএফের) অর্থায়ন ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযাগীতায় সমান্তবর্তী কৃষি ইউনিট প্রাণীসম্পদ খাত নিরাপদ মাংস উৎপাদন জলবায়ু সহিষ্ণু বাউ মুরগী পালনের জন্য ২৫ জন মহিলাক বেছে নেয়। তাদরকে ৪৩ দিন পালনের জন্য ১৫০টি মুরগী দেওয়া হয়। এর আগে তাদের বসত বাড়ীত তৈরী করে দেওয়া হয় বঁাশের মাচা। তারপর মুরগী পালনের সমক্ষ ধারনা ও কলাকৌশল জানাতে তাদরকে প্রশিক্ষণ শেষে জীবানুনাশক ও মুরগীর টিকা দেওয়া হয়।
সীমান্তবর্তী পারকষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামর মুরগী পালনকারী রহিমা বেগম বলেন,প্রশিক্ষণ শেষ আমরা জানতে পারি বাউ মুরগী ৪২ থেকে ৪৩ দিন গড়ে ১ কজি ওজন হবে। ১৫০টি মুরগী পালনে এখনা পর্যন্ত ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ মুরগী গুলা যদি বিক্রি করতে পারি তাহলে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ হবে।
একই গ্রামের চন্দনা খাতুন জানান, ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ১৫০টি মুরগী পেয়ছিলাম, এর মধ্যে ১৮টি মারা গেছে। মুরগী পুষতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। আশা করি লাভ হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ এহেতশামুল হক বলেন, আমরা ২৫ জনকে বাউ মুরগী পালনের জন্য ১৫০টি মুরগী দিয়েছি। আগে আমরা আমাদের সদস্যদর মধ্যে এ মুরগী সম্পর্ক আলােচনা করে নিয়েছি। এতে লাভ এবং গ্রহণযােগ্যতা দুটি ব্যাপারই চলে আসে। অনেক সােনালী ও দেশী মুরগী খেতে চাই। সােনালী মুরগী পালনে দেখা যায় দু’মাসে এর ওজন ৭শ থেকে ৮শ গ্রাম হয়। সে ক্ষেত্রে লাভ কম হয়। কি বাউ মুরগী ৪২ থেকে ৪৩ দিন ১ কজি ওজন হচ্ছে। এ মুরগীর মাংসের স্বাদ সােনালী ও দশী মুরগীর মত। এ ব্যাপারগুলা জানানাে হল মহিলারা মুরগী পালনে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদেরকে ১৫০টি মুরগীর বাচ্ছা ও মাচা তৈরী বাবদ খরচ এবং জীবানুনাশক ও মুরগীর টিকা সঠিকভাব দেওয়া হয়। মুরগী পালনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল তারা সেটা যথাযথভাব গ্রহণ করে। ৪২ দিন একেকটি মুরগী ১ কেজিরও বেশী ওজন হয়েছে। সে কারন এটার গ্রহণ যােগ্যতা অনেক বেড়েছে। অনেকে এ মুরগী পালন বড় আকার করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ মুরগী পালন আমরা যথেষ্ট আশাবাদী।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ মােঃ মশিউর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় ওয়েভ ফাউন্ডশন প্রাণীসম্পদ বিষয় ব্যাপক কাজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ জন মহিলাক প্রশিক্ষণ দিয়ে বাউ মুরগী পালন উদ্বুদ্ধ করেছে। বাউ মুরগীর বাচ্ছা বড় হয় সন্তষজনকভাবে এবং মৃত্যুর হার কম। ৪৩ দিনের মধ্যে এ বাচ্ছা ১ কেজি ২০০ থেক ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এদিন গুলাতে এককটি মুরগী ২ কজি মত খাদ্য গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে একটি মুরগী পালন ব্যয় হয় ১৬০ থেক ১৭০ টাকা। সেটা বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। এভাবে যদি কেউ ১০০ মুরগী পালন কর তাহল ব্যয় বাদে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাভ হবে। এ মুরগীর বৈশিষ্ট হলাে ,এর মাংস খুবই সুস্বাদু । এ মুরগী পালন গ্রামীণ পুষ্টি ও আমিষের অভাব পূরণসহ দরিদ্র জনগােষ্ঠীর স্বাবলম্বী হওয়ার সুযাগ সষ্টি হবে।