জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ভৈরব নদীর পাড়ে একটি পান সংলগ্ন কাঁচা রাস্তা থেকে পুলিশ ২১ ফে্রুয়ারি উপজেলা সন্তোষপুর গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে ফজলু ওরফে মজনু খা(২৯) এর মরদেহ উদ্ধার করেন। তাৎক্ষণিক ভাবে মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব না হওয়ায় পুলিশ লাশ চুয়াডাঙ্গা মর্গে প্রেরন করেন।
এদিকে নিহত ফজলু ওরফে মজনু খার সাথে থাকা একই গ্রামের আপন ফুফাতো ভাই জব্বার মিয়া(২৯) নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়। নিহতের লাশ উদ্ধারের একদিন পর ঘাতক ফুফাতো ভাই জব্বার মিয়া হঠাৎ বাড়ীতে ফিরে এসে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে এবং নিহত মজনু খার বাবা-মায়ের নিকট মাফ চাইতে থাকে। এতে নিহতের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
ঘটনাটি পুলিশ জানতে পেরে ঘাতক জব্বার মিয়াকে গ্রেফতার করেন। জব্বার মিয়া একই গ্রামের দলিল উদ্দিনের ছেলে। ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
কিন্তু পরবর্তীতে ঘটনা নিশ্চিত হয়ে নিহতের পিতা কাশেম আলী বাদী হয়ে ঘাতক জব্বার মিয়ার একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে,নিহত মজনু খা ও ঘাতক জব্বার মিয়া আপন মামাতো ফুফাতো ভাই এবং পাশাপাশি বাড়ীতে বসবাস। তাদের দু’জনের মধ্যে চরম ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা দু’জন উপজেলার দেহাটিতে অবস্থিত একটি পোল ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতো। তারা দু’জন মিলে নিহত মজনু খার ব্যাটারি চালিত ভ্যান গাড়ীতে করে উক্ত ফ্যাক্টরিতে যাতায়াত করতো।
তারা প্রতিদিনের মত ২০ ফেব্রুয়ারী দুপুরের দিকে পোল ফ্যাক্টরির কাজ শেষে বাড়ীতে ফিরে যায়।
তারা একই দিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভ্যান গাড়ী যোগে বাড়ী থেকে বের হয়। রাতে তারা বাড়ীতে ফিরে না যাওয়ায় নিহত মজনু খার মোবাইল ফোনে পরিবারের সদস্যরা রাত ৯ টার দিকে কল করলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
নিহতের পিতা কাশেম আলী জানান,মজনুকে আমরা মোবাইল ফোনে না পেয়ে তাকে খোঁজাখুজি করতে থাকি।
এক পর্যায়ে আমার ছেলের লাশ ২১ ফেব্রুয়ারী সকালের দিকে মনোহরপুর ভৈরব নদীর ধারে জনৈক মোশাররফ হোসেনের পান সংলগ্ন কাচা রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে আমার আপন ভাগ্নে ঘাতক জব্বার মিয়াকে পাওয়া যায় না।
আমার ছেলে মজনুর লাশ দাফন কাফনের একদিন পর ২২ ফেব্রুয়ারী সকালের দিকে ঘাতক জব্বার মিয়া বাড়ীতে ফিরে এসে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে এবং আমাদের কাছে মাফ চাইতে থাকে। এতে তার প্রতি আমাদের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। আমরা ব্যাপারটি পুলিশকে জানালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেন।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম জাবিদ হাসান বলেন, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,নিহত মজনু খাকে ঘটনাস্থল থেকে লোকজন করে জীবননগর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রথমদিকে মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব না হওয়ায় লাশের সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরন করা হয়। এদিকে সন্দেহের তালিকায় থাকা জব্বার মিয়াকে ঘটনার একদিন পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়া হয়। সে গ্রেফতার হবার পর বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নিয়ে গেছে। মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে। বিভিন্ন কাল্পনিক গল্প ঘটনা তৈরি করে মিস গাইড করেছে। পরে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক সাব-ইন্সপেক্টর ফিরোজ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঝিনাইদহ ডাক বাংলা এলাকা থেকে নিহতের ভ্যান ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
ঘাতকের জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে,হত্যাকান্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। স্পিড ড্রিংকস’র সাথে কৌশল কীটনাশক মিশিয়ে তা খাইয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় জীবননগর থানার একটি নিয়মিত হত্যা মামলা করা হয়েছে।