দর্শনা অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় রীতিমতো আতংক ছড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আচরণ এতটাই বেপরোয়া যে তাদের কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এরা অনেকটাই ‘ডনের মত আচরণ করে।
আক্রমণাত্মক ভাবভঙ্গি ও চালচলন, অশ্লীল বাচনভঙ্গি, পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে জড়ো হয়ে কোনো কারণ ছাড়াই উচ্চস্বরে গালিগালাজ করা। রাতবিরাতে মহল্লার বিভিন্ন বাড়ির মূল ফটকে লাথি মেরে বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে ভিতিকর পরিস্থিতি তৈরি,স্কুল কলেজ ছুটি হলে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, উচ্চশব্দে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ও হাইড্রলিক হর্ণ বাজিয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টি করে জনসাধারনের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিনের পর দিন কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া কর্মকান্ড ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্ট এলাকাসী ও অভিভাবকদেরকে। এদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেই তেমন কোনো ভূমিকা।
সুত্র বলছে, গ্যাং গ্রুপের কিছু সদস্য দর্শনার একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যুক্ত। আর ওই প্রভাবশালী মহলের বলয়ে থেকে এরা নানা কর্মকান্ড সংঘটনে সিদ্ধহস্ত। বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ালেও এদের কেও কিছু বলতে সাহস পায়না।
জানা গেছে, ২৫ ফেব্রুয়ারী, রবিবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ সবেবরাতের রাতে দর্শনা পৌর শহরের আজমপুর মহল্লার অন্তত দশটি বাড়ির মূল ফটকে লাথি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে একটি গ্যাং গ্রুপ। সেই তাণ্ডবের একটি দৃশ্য ধরাপড়ে ভবনে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায়।
সিসিটিভিতে রেকর্ড হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় দর্শনা-মুজিবনগর মহাসড়ক থেকে আজমপুর মহল্লায় প্রবেশের সংযোগ সড়কের শুরতেই থাকা বাড়ির মূল ফটকে ৮/১০ জনের একটি গ্রুপ বেধড়ক লাথি মারতে থাকে। এরপর উচ্চশব্দে আওয়াজ করে স্থানীয় কাউন্সিলরের বাড়ির ফটকে আঘাত করে।
এরপর আরো কয়েকটি বাড়ির ফটকে একই ভাবে আঘাত করে চলে যায় গ্রুপটি। ভিডিও পর্যালোচনা করে রিয়াদ নামের একজনের নাম শোনা যায়। খোজনিয়ে জানাযায় রিয়াদ দর্শনা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার ভাগ্নে।
ভুক্তভোগী এক বাড়িওয়ালা বলেন, রোবিবার রাত ১১টার দিকে বাড়ির ফটকে তীব্র শব্দে কয়েকজন কিশোর বা যুবক আঘাত করে। এতে আমরা আতংকিত হয়ে পড়ি। এরপর ঘরের জানালার কাছে এসে উচ্চশব্দে অশ্লিল কথা বলে। এতে করে আমার একবছরের মেয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এর আগের এমন ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিকার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতক্ষদর্শী জানান, এই গ্রুপটা খুবই ভয়ংকর। এদের একজনের নাম সম্রাট। একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী মহল এদের শেল্টার দেয়।
জানতে চাইলে দর্শনা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র১- রবিউল হক সুমন বলেন, আমিও বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি রবিবার রাতের ঘটনা। একদল উশৃংখল কিশোর রাতে বেপরোয়া আচরণ করছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে নানা সামাজিক কর্মকান্ডে তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে। যদি শুরুতেই নিয়ন্ত্রন করা না যায় তাহলে এরা ভবিষ্যতে আরো বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে।এ ঘটনায় দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা বলেন,আমরা সাথে সাথে পুলিশ পাঠিয়েছি।পরে তাদের আর খুজে পাওয়া যায়নি।তবে এসব কর্মকান্ড যারা ঘটাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় এনে এদের শাস্তি দেওয়া হবে।তবে শহরে যারা দ্রত গতিতে মোটরসাইকেল চালায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) ক্রাইম এন্ড অপস) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ (পিপিএম) বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকান্ড সমাজে বড় একটা সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে পাড়া-মহল্লাসহ যেখানে তারা থাকবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। তাদেরকে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।