সাজ্জাতুল ইসলাম,গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে :
কিছু কিছু হত্যাকান্ড মানুষকে কাঁদায়,মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়। তেমনি একটি হত্যাকান্ড তৎকালিন ঢাকার বংশাল থানার কর্মকর্তা এসআই গৌতম রায়ের হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডটি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও হত্যাকান্ডের ১৪ বছর পরেও বিচার পায়নি তার পরিবার। আদৌ বিচার পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় স্বজনদের।
আজ শুক্রবার ১৯ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার বংশাল থানায় অপারেশন অফিসার এসআই গৌতম রায় এর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নেত্রকোনার পূর্বধলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ও ভোরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন।
গৌতম রায় গৌতম রায় উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মৃত ইন্দ্র ভূষণ রায় ও বকুল রানীর ছেলে। তিনি চাকুরি করতেন রাজধানী ঢাকার বংশাল থানায়। অপারেশন অফিসার (এসআই) হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
২০১০ সালের এই দিনে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে রাতে ওয়ারীর বাসায় ফেরার পথে সুত্রাপুর থানার লাল মোহন সাহা স্ট্রিট এলাকায় একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী অত্যান্ত সুপরিকল্পিত ভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এস আই গৌতম রায় হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার পরিবার।
এস আই গৌতম রায় জীবিত অবস্থায় অনেক মামলার তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করে পুরস্কারও পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। সেই মানুষটিকে দায়িত্বরত অবস্থায় হত্যা করে পালিয়ে গেছে খুনিরা, অথচ ১৪ বছর পরেও পুলিশ তার হত্যাকান্ডের প্রকৃত আসামীদের খুঁজে বের করতে পারেনি।
২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে রাতে ওয়ারীর বাসায় ফেরার সময় সুত্রাপুর থানার লাল মোহন সাহা স্ট্রিট এলাকায় একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী অত্যান্ত সুপরিকল্পিত ভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
পরে রাতেই তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
হত্যাকান্ডের পরদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজপি নব বিক্রম ত্রিপুরা, র্যাবের ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকার সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আশ্বাস দেন।
হত্যাকান্ডের পর এ ব্যাপারে সুত্রাপুর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এর পর র্যাব পুলিশের মধ্যে আসামী ধরা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। হত্যাকান্ডটি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসাবে ডিবি পুলিশের কতাছে হস্তান্তর করা হয়।
দীর্ঘসুত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা তুলে ধরে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের প্রশ্ন মোট ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাত্র ২ জনের সাখ্য গ্রহন নিতেই ১০ বছর লেগে গেল,
বাকী সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে কত বছর সময় লাগবে? তাছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় খুনি কারা বা খুনিদেও শাস্তিই বা কিভাবে নিশ্চিত হবে তা নিয়েই আশ্বস্ত হতে পারছে না তার পরিবার। এ ছাড়া প্রকৃত আসামীদের আড়াল করতেই কি এ দীর্ঘসুত্রিতা প্রশ্ন নিহত এস আই গৌতম রায়ের পরিবারের?
ঘটনার একমাস পর তৎকালিন ডিএমপি কমিশনার দাবি করে ছিলেন হত্যকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তল দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্ত সিআইডির ল্যাবে করা আলামত পরীক্ষার জন্য যে দুটি অস্ত্র ও গুলি (তিনটি) ও গুলির খোসা (তিনটি) পাটিয়েছেন সেগুলির পরীক্ষা করে দেখা গেছে এইসব গুলি ও দুটি অস্ত্র (উদ্ধার করা) থেকে ছোড়া হয়নি।
এস আই গৌতম রায়ের ছোট ভাই সাংবাদিক তিলক রায় জানান, আমার দাদার হত্যাকান্ডটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। যে পিস্তল দিয়ে আমার দাদাকে হত্যা করা হয়েছে সেই পিস্তল পুলিশ আজও উদ্ধার করতে পারেনি।
দুজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকার পরেও আসল অপরাধীচক্রকে পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি। বরং পুলিশ প্রকৃত আসামীদেও আড়াল করার চেষ্টা করছে। তাই আমরা বারবার অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি তুলেছিলাম। যেহেতু আমাদেরকে মামলার বাদী হতে দেয়নি পুলিশ, সেহেতু পত্রিকার মাধ্যমে এ আপত্তি দিয়েছিলাম।
প্রসঙ্গত তার এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে মিছিল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বিচার না পেয়ে এলাকাবাসী ও তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এসআই গৌতম রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার গ্রামের বাড়ি শ্যামগঞ্জে গীতা পাঠ, নাম কীর্তন ও প্রসাদ বিতরনের আয়োজন করা হয়েছে। ##