সৌদি কোম্পানির বন্দীদশা থেকে স্বামীকে রক্ষায় জীবননগরে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

জীবননগর অফিস:-

প্রতারণার শিকার হয়ে সৌদি আরবে বন্দী স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের ভুক্তভোগী পরিবারের এক গৃহবধু।

বুধবার সকাল সাড়ে দশটার সময় জীবননগর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হাবিবা খাতুন নামের ওই গৃহবধু দাবি করেন, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে তাঁর স্বামীকে এখন সৌদি আরবে এক কোম্পানির নিকট বিক্রির মাধ্যমে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়া ওই নারী উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামে সৌদি প্রবাসী ইব্রাহিমের স্ত্রী হাবিবা খাতুন শিল্পী। তিনি বলেন,একই গ্রামের মৃত চান মিয়া ছেলে ওয়াজ হোসেন বিপ্লব তার স্বামীকে প্রতারণা পুর্বক সৌদি আরবে নিয়ে একটি কোম্পানির নিকট বিক্রি করে দেয়ায় তার স্বামী ইব্রাহিম সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এদিকে অভিযুক্ত বিপ্লবের দাবী তিনি ইব্রাহিম বিধি মোতাবেক সৌদি আরবে নিয়ে সেখানে তাকে একটি কোম্পানিতে কাজের ব্যবস্থাও করি। কিন্তু সেখানে সে একটি মারামারির ঘটনায় জড়িয়ে পড়লে কোম্পানি তাকে আটকে রাখে। পরবর্তীতে যথারীতি কাজে যোগদান করে। ইব্রাহিমের সাথে কোন প্রকার প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়নি।

গৃহবধু শিল্পী অভিযোগ করে বলেন,আমার স্বামী সৌদি কোম্পানির মালিকের কাছে বাংলাদেশের ফেরত আসার জন্য পাসপোর্ট চাইলে কোম্পানি পাসপোর্ট ফেরত না দিয়ে ৫ লাখ টাকায় তাকে ক্রয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। সেই পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিতে পারলে পাসপোর্ট ফেরত দিলেই কেবল আমার স্বামী ইব্রাহিম দেশে ফেরত আসতে পারবে।

পাসপোর্ট ফেরতের জন্য আমার স্বামী আকুতি মিনতি জানাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। আমার স্বামী ইব্রাহিম বর্তমানে সৌদি আরবে একটি বাড়ীতে খাদ্য খাবার ছাড়া আটকা আছে। তারা ৫ লাখ টাকা পেলে আমার স্বামীকে ছেড়ে দিবে।

গৃহবধু শিল্পী লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, তার স্বামী ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। একই এলাকার দালাল বিপ্লব হোসেন ওয়াজের খপ্পরে পড়েন তিনি। সৌদি আরবে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান তিনি। তার আশ্বাসে ছোট দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে রেখে প্রবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইব্রাহিম।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করে তাকে সৌদি আরবে পাঠান বিপ্লব। তবে দালাল বিপ্লব তাকে টুরিস্ট ভিসায় পাঠানোর কারণে তিনি সৌদি আরবে পড়েন বিপদে। পড়েন পুলিশের ঝামেলায়। বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন এখন তার দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সৌদি আরবে কোম্পানির মালিকপক্ষ কোনো কাজ ছাড়া ১৫ দিন তাকে আটকে রাখে। ঠিকমতো খেতে দিতো না। পরে তারা তাকে আরেক কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে।

সেখানেও তাকে আটকে রাখা হয়। আমার স্বামী আমাকে বিষয়টি জানালে জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। বিপ্লব সকল দায় স্বীকার করে দুই মাসের মধ্য আমার স্বামীকে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর জরিমানা স্বরুপ ৩৮ হাজার টাকা এবং তার কথা মতো কাজ না দিতে পারে আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ চার লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিবে বলে স্ট্যাম্পে সই করে।

তবে সে কাজ দেয়নি। আর আমাদের দশ হাজার টাকা এবং আমার স্বামীকে নয় হাজার টাকা দিয়েছে। এরপর বিপ্লব আমার স্বামীকে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করিয়ে নিয়ে সপ্তাহে ৫০ থেকে ১০০ রিয়েল দিচ্ছিল। যা বাংলাদেশি টাকায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। পরে অনেকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।

oplus_1026

শিল্পী খাতুন আরও বলেন, আমার স্বামী ওই কোম্পানির মালিকের কাছে বাংলাদেশের ফেরত আসার কথা বলে পাসপোর্ট চাইতে গেলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। যদি ৫ লাখ টাকা দিতে পারো তাহলে আমরা তোমাকে পাসপোর্ট দিব।পরে আমার স্বামী আকুতি মিনতি জানালে তারা তাকে সাহায্য না করে একটি মামলা দেয়।

এখন সৌদি আরবে একটি বাড়িতে কোনো  খাবার ছাড়া তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তারা ৫ লাখ টাকা দাবি করছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব হোসেন ওয়াজ বলেন, এটা মিথ্যা। ৪ জন কোম্পানির বসের সাথে মারামারি করেছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সৌদিতে মামলা হয়। তাদের ১৫ হাজার রিয়াল করে জরিমানা করা হয়েছে। এই নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলা করে বেড়াচ্ছে। তারা সৌদিতে মারামারি করলে তো আর দায়ভার আমি নিতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, তারা সেখানে ফুড ডেলিভারির কাজ করে। ওটা টার্গেটের কাজ। ৫০০ ডেলিভারি দিলে ২ হাজার ৫০০ রিয়াল পাবে। এখন তারা যদি টার্গেট পূরণ করতে না পারে তাহলে তো টাকা কম পাবে এটাই স্বাভাবিক। তার সাথে আরও যারা বিদেশে গিয়েছে তারা কিন্তু ঠিকই সেখানে কাজ করছে।

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম জাবীদ হাসান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে তাদের থানায় ডেকে একটি সমাধান করা হয়।এখন আবার আবার ঝামেলা শুরু হয়েছে শুনছি।

বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। বিপ্লব চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে আছে, সে ফিরলেই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে। শিল্পী’র সাথে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ইব্রাহিমের বাবা খাজা মইনুদ্দিন,মা সবেদা বেগম, তার দুই শিশু কন্যা।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *