জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর বাজারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা তাহাজ্জুত হোসেনের দুই ছেলে ও ভাইদের নেতৃত্বে বাজারের
ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাবে ভাংচুর ও দু’জন ব্যবসায়ীর ওপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করা হয়েছে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
আহতদেরকে জীবননগর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। ঘটনার ব্যাপারে জীবননগর থানায় মামলা করা হয়েছে।
জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের তিন ফসলি কৃষি জমিতে একটি বিদেশী কোম্পানি কর্তৃক সোলার প্লান্ট নির্মানের পরিকল্পনা হাতে নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। কিন্তু এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এলাকার কৃষকেরা।
ফলে প্রভাবশালী মহলটির সাথে এলাকার কৃষকদের ২০১৮ সাল থেকে বিরোধ চলে আসছে। ঘটছে একের পর এক মামলা-হামলার ঘটনা।
অভিযোগ আছে বিদেশী কোম্পানি কৃষ্ণপুর মাঠে সোলার প্লান্ট নির্মানে এলাকার কৃষকদের শায়েস্তা করতে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলটি কোম্পানির হয়ে নানা ভাবে হামলা করে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে ভুমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম কৃষ্ণপুর মাঠ পরিদর্শনে যান। সেখানে গ্রামবাসী কাফনের কাপড় পরে হাতে বিষের বোতল নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং তারা সোলার প্লান্ট নির্মানের জন্য বিদেশী কোম্পানিকে জমি দিবে না বলে দাবী করে।
এ সময় সেখানে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা তাহাজ্জুত হোসেনকে পেয়ে এলাকার কৃষকেরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
কৃষকদের অভিযোগ মীর্জা তাহাজ্জুত হোসেন কোম্পানির লোক হিসাবে তাদেরকে নানা অত্যাচার নির্যাতন করে আসছেন এবং মাঠের কৃষি জমিতে প্রভাব খাটিয়ে সোলার প্লান্ট নির্মানের চেষ্টা করে আসছেন।
এ সময় মীর্জা তাহাজ্জুত হোসেন চেয়ারম্যান কৃষ্ণপুর কৃষকদের তোপের মুখে পড়েন। পুলিশ অবশ্য তাকে নিরাপদে বাড়ী পৌছানোর ব্যবস্থা করেন।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,তাহাজ্জুত হোসেন চেয়ারম্যানের ছেলে সবুজ মীর্জা,সাচ্চু মীর্জা,ভাই আজাবুল মীর্জার নেতৃত্বে ১০-১২ জন দেশী অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে রায়পুর বাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাবে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করের পালিয়ে যায়। তাদের হামলার শিকার হয় কৃষ্ণপুর গ্রামের ওসমান গনি ও ফারুক। তারা মারাত্মক ভাবে রক্তাক্ত জখম হলে এলাকাবাসী উদ্ধার করে জীবননগর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
ঘটনার শিকার রায়পুর বাজারের সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন,আমরা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবুজ মীর্জা ও সাচ্চু মীর্জাদের নেতৃত্বে তাহাদের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে মারাত্মক ভাবে জখম করে এবং আমার দোকান ভাংচুর করে নগদ ৭১ হাজার টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
কৃষ্ণপুর মাঠের ফসলি জমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও কেন্দ্রিয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও সাজ্জাদ হোসেন বলেন,তাহাজ্জুত চেয়ারম্যান বিদেশী সোলার প্লান্ট কোম্পানির সাথে আতাত করে আমাদের কোম্পানি পাইয়ে দিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন।
তার কথামত গ্রামের কৃষকেরা কোম্পানিকে জমি দিতে রাজি না হওয়ায় নানা ভাবে গ্রামের মানুষকে অত্যাচার নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছেন।
এমনকি রায়পুর গ্রামবাসীকে ইউনিয়ন পরিষদের সেবাও থেকেও নানা ভাবে বঞ্চিত করে আসছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার হুকুমে তারা ছেলে ও ভাইদের নেতৃত্বে রায়পুর বাজারে কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকদের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাবে ভাংচুর,লুটপাট ও জখম করে। তাদের ভয়ে গ্রামের মানুষ রায়পুর বাজারে যেতে পারছেন না।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মীর্জা তাহাজ্জুত হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমি ঘটনার সময় ছিলামও না এবং আমি জানিও না। আমি সোলার প্লান্ট কোম্পানি কারো সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ভুমি মন্ত্রণালয়ের যু্গ্ম-সচিব ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলে আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে সেখানে যাই।
কিন্তু কৃষ্ণপুরের মানুষ বিনা উস্কানিতে তদন্ত কমিটির সামনে আমাকে লাঞ্চিত করে। পরে তারা সন্ধ্যায় রায়পুর বাজারে থাকা আমার অফিস ও ছেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম জাবিদ হাসান বলেন,ঘটনার ব্যাপারে থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে।