জীবননগর সোন্দাহে ভাগ্যের চাঁকা ঘুরাতে নিজের জমি বিক্রি করে বিদেশে স্ত্রীর জমি বিক্রি করে এক মাসের মাথায় দেশে ফিরে মুকুল এখন নি:স্ব

জীবননগর অফিস:-

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের সোন্দাহ গ্রামের এক হতদরিদ্র কৃষক মুকুল হোসেন(৪২) দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরানোর আশায় নিজের জমি বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে জিম্মি হন এদেশীয় দালাল চক্রের সহযোগীদের হাতে।

পরে এক মাসের মাথায় মুকুল তার স্ত্রীর শেষ সম্বল ৫ কাঠা জমি বিক্রি করে তাকে দেশে ফিরে আসেন। মুকুল এখন সহায়-সম্বল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে দালাল চক্রের বিচারের দাবীতে ঘুরছেন পথে পথে।

তিনি টাকা উদ্ধারে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জীবননগর উপজেলার সোন্দাহ গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে হতদরিদ্র মুকুল হোসেন পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি। তিনি স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে বেশ ভাল ভাবেই দিন কাটাচ্ছিলেন।

এ অবস্থায় তার গ্রামের মৃত আব্দার রহমানের ছেলে আদম ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান ও পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের সুফিয়ান তাকে কিরকিস্তানে ভাল বেতনের ভাল কাজে পাঠানোর জন্য প্রলোভন দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে তাদের কথামত সংসারে সচ্ছলতা ফিরাতে বিদেশ যেতে রাজি হয়ে যান।

ভুক্তভোগী মুকুল হোসেন বলেন,আদম ব্যবসায়ী হাবিবুর ও সুফিয়ানদের কথামত ভাগ্যের চাঁকা ঘুরানোর আশায় আমার সহায়-সম্বল বলতে মাঠের ১০ কাঠা জমি ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে তাদের হাতে তুলে দিই।

তারা আমাকে কিরকিস্তানে পাঠানোর কথা বলে। কিন্তু তারা আমার সাথে প্রতারণা করে গত জুন মাসের ৬ তারিখে বিমান যোগে উসবিকিস্তানের পাঠিয়ে দেয়।

আমি সেখানে পৌছালে সে দেশে থাকা তাদের দালালরা আমাকে একটি হোটেলের ভিতরে আটকে রাখে। তারা আমাকে সেখানে কাজের ব্যবস্থা না করে একের পর নানা ভাবে অত্যচার নির্যাতন করতে থাকে। তারা আমাকে সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা না করায় সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করি।

এমন পরিস্থিতিতে বাড়ীতে থাকা আমার স্ত্রী-সন্তানেরা আদম ব্যবসায়ী হাবিবুর ও সুফিয়ানের নিকট বার বার ধর্ণা দিলে তারা আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিকট টাকা দাবী করে এবং বলে টাকা না পাঠালে তারা আমার কিডনি বিক্রি করে টাকা নিবে।

শেষ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর নামে থাকা শেষ সম্বল ৫ কাঠা জমি বিক্রি করে টাকা পাঠালে আমি গত শনিবার রাতে দেশে ফিরে আসি। আমার এখন আর সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই।

আমি এখন নি:স্ব,পথের ফকির। আমি এখন কি করব,ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়ায় বা কি দিয়ে চালাবো সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

আমি বাড়ীতে এসে হাবিবুর ও সুফিয়ানদের সাথে কথা বলি। কিন্তু তারা আমাকে কোন ভাবেই পাত্তা দিচেছ না। তারা আমাকে কিরকিস্তানে পাঠানোর কথা বললেও উসবিকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়।

সেখানে আমাকে তাদের সহযোগীরা কাজের ব্যবস্থা না করে উল্টা আমাকে একটি হোটেলে আটকিয়ে বাড়ী থেকে আরো টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে।

ঘটনার ব্যাপারে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের শক্ত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন,ঘটনার ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু বলেনি। তবে ঘটনার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানানো যাবে।

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম জাবিদ হাসান বলেন,ঘটনার ব্যাপারটি দু:খজনক। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *