গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:-
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের দশটি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন দশ গ্রামের অসংখ্য পরিবার।
চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষদের। এ অবস্থায় ভাঙনরোধে দ্রুত স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে বর্ষাকালে ভাংনামারী ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলোয় ভাঙন দেখা দেয়। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য পরিবার নিজেদের বাড়িঘর ও ফসলের জমি হারিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছেন। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। এছাড়াও নদে অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে নদের পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের বেশিরভাগ সময় নদ শুকিয়ে হাঁটু পানি থাকলেও বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢলে পানি বেড়ে শুরু হয় ভাঙন। গত কয়েক বছরে এই ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রায় কয়েকশত একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বসতভিটা হারিয়েছে দুই শতাধিক পরিবার।
শুক্রবার (২আগষ্ট) সরেজমিনে ভাংনামারী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদ ভাঙনের শিকার মানুষের দুর্দশা। এখন নদের পানি একটু কমলেও সম্প্রতি নদের স্রোতে ভাঙ্গনের কবলে অনেক পরিবারের বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলার খোদাবক্সপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রাশিদা খাতুন। ভাঙা ঘরে চৌকিতে বসে প্রমত্তা নদের পানে উদাস নয়নে তাকিয়ে খোঁজেন জীবনের খতিয়ান। এই নদেই যে হারিয়েছে তার জীবন-জীবিকার অবলম্বন ভিটেমাটি-ফসলি জমি। সন্তানদের নিয়ে যে ঘরে বাস করতেন তাও নদে বিলীন।
রাশিদা বেগম বলেন, ‘এই জীবনে সাতবার পর্যন্ত বাড়ি ভেঙ্গেছি। এখন আর বাড়ি ভাঙার উপায় নেই। একটু জায়গা নেই যে নদীপার থেকে সরে যাবো।’
শুধু রাশিদা খাতুন নয়, একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র পাড়ের অসংখ্য মানুষের। এক সময়ের বিপুল জমিজমার মালিক গেরস্ত অনেকেই এখন ভাঙনের কবলে পরে বাস্তুহারা। মানবেতর জীবনযাপন করলেও মিলছে না কোনো সহায়তা। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে উদ্যোগ না নিলে বিলীন হয়ে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি। এ অবস্থায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই অনন্তগঞ্জ, ভাটিপাড়া, ভাংনামারীর চর, উজান কাশিয়ারচর, বয়রা, খোদাবক্সপুর, দূর্বাচর, চরভাবখালী, গজারিপাড়া, সহ দশ গ্রামে ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
খোদাবক্সপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, এখন পর্যন্ত সাতবার বাড়ি ভাঙছে নদের পানিতে। ৫৬ কাঠা জমি নদে বিলীন হয়েছে। নতুন ভাঙনে এখন হারালাম ভিটা। মাথা গোঁজার আশ্রয়ের জায়গাটুকু রইল না।
ভাঙনের শিকার ভাংনামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমাদের জমি বাড়ি নদে বিলীন হয়। আমাদের ২০ কাঠা জমি ভাঙতে ভাঙতে আড়াই কাঠাতে ঠেকেছে। আমরা ছাড়াও এলাকার আরও ২০টি পরিবারের একই অবস্থা৷
ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, উজানকাশিয়ার চর গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৯টি ঘর, একটি কমিউনিটি সেন্টার, ও কয়েকশ বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন না ঠেকালে মানুষ ভিটেহারা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে ইতোমধ্যে জায়গাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনের জন্য দায়ী হলো অপরিকল্পিতভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করা ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। বালু তোলার ফলে সৃষ্ট গর্তের কারণে পানির স্রোত বাড়ায় ভাঙন বাড়ছে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদার আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, আমরা এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার খোঁজ নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্রক্ষপুত্র নদের খনন কাজ চলছে। নদী খননের ফলে কয়েকটি স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে কথা হয়েছে যেন গ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।