গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বিগত ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল।
এতে যাত্রী না থাকায় বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটছেন স্থানীয় কুলি ও ব্যবসায়িরা। এই অবস্থায় পকেটে টাকা না থাকায় পরিবার নিয়ে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ তার চোখে-মুখে।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ভিড় করে শুয়ে আছেন একদল যাযাবর মানুষ। এদের কেউ শুয়ে আছেন, আবার কেউ বসে আছেন আপন মনে। যেন টিকিট কাউন্টারটাই তাদের চিরচেনা বাড়িঘর। তবে স্টেশনের ভেতরের প্লাটফর্মে বসে আছেন কয়েকজন পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য। অলস সময় পার করছেন কয়েকজন স্টেশন ব্যবসায়ী। এর বাইরে স্টেশনের চারপাশে বইছে সুনশান নিরবতা।
একই অবস্থা স্টেশন এলাকার বাইরের হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চা দোকানগুলোর। যেন কোথাও কেউ নেই। এরই মাঝে গরমে অতিষ্ঠ কর্মহীন শ্রমজীবীদের দেখা গেছে গাছের ছায়ায় বসে পার করছেন অলস সময়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের চা দোকানি নজরুল ইসলাম জানান, চা বিক্রির আয়েই চলতো তার সংসার।
কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আয়-রোজগার কমেছে এই চা দোকানির। নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকার সময় প্রতিদিন দোকানে পাঁচ হাজার টাকার মতো বেচাকেনা হতো। এখন সেটা কমে এক হাজারে নেমে এসেছে।
নজরুলের দোকানের পাশেই চেয়ার-টেবিল পেতে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন মো. শাহীন। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো।
কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেচাকেনা চার থেকে পাঁচশ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে। শাহীন বলেন, ব্যবসার ওই আয়েই চলতো সংসার ও দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় টান পড়েছে আয়-রোজগারে।
যেহেতু আমাদের ব্যবসা ট্রেনের যাত্রীকেন্দ্রিক। তাই ট্রেন না চললে যাত্রী আসবে না। এজন্য দ্রুত ট্রেন স্বাভাবিক না হলে আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গৌরীপুর জংশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় শুধু নজরুল আর শাহীনের আয়-রোজগার কমেনি। আয় রোজগারে টান পড়েছে স্টেশনের কুলি, হকার, ভিখারি, শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের।
স্থানীয়রা জানান, এই স্টেশনে প্ল্যাট ফরমে স্থায়ী ও অস্থায়ী ৩০টি দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোর ব্যবসা স্টেশনকে ঘিরে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই থেকে সারা দেশের মতো গৌরীপুর জংশনেরও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা-ভাব দেখা দিয়েছে।
স্টেশনের ক্যান্টিনের কর্মচারী মনির হোসেন বাবু বলেন, আমি প্রতিদিন তিনশ টাকা মজুরিতে কাজ করতাম। এখন ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় আয় নেই। অলস সময় কোথায় কাটাব। তাই বন্ধ ক্যান্টিনের সামনে এসে একা বসে থাকি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন হয়ে প্রতিদিন জারিয়া-ঢাকা, মোহনগঞ্জ-ঢাকা ও জামালপুর চট্টগ্রাম এই ৩টি রেলপথে আন্তঃনগর, কমিউটার, মেইল ও লোকালসহ ২৪টি ট্রেন চলাচল করে।
এই ট্রেনগুলোতে ঘুরে ঘুরে স্থানীয় প্রায় অর্ধশত হকার তাদের মাল বিক্রি করতেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা।
হকার আব্দুল মোতালেব বলেন, আমি ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে দাঁতের মাজন ও টুথব্রাশ বিক্রি করতাম। এই আয়েই চলত সংসার। এখন অপেক্ষায় আছি কবে ট্রেন চালু হবে। দ্রুত ট্রেন চালু না হলে আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।
গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার সফিকুল ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত ১৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সারা দেশে ট্রেন চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হতে পারে।