বিশেষ প্রতিনিধি:
সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ময়মননিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সদ্য সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন। উপজেলার দাপুটে জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতাদেরও আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। আত্মগোপনে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা হলেন, হলেন- ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলুফার আনঞ্জুম পপি,
সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ম. নুরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, রমিজ উদ্দিন স্বপন,
সাবেক পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সানাউল হক, সাধারণ সম্পাদক ও
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জাল হোসেন খান সহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও তাদের অনুসারি পৌরসভার কাউন্সিলর, গৌরীপুর ইউনিয়ের চেয়ারম্যান হযরত আলী, সহনাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালা উদ্দিন রুবেল ,
বোকাইনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল মুক্তাদির শাহীন, ডৌহাখলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, রামগোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি,
মাওহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল ফারুক, সিধলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী। যে কারণে হামলা মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ায় এমপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেয়রগণকে ক্ষমতাচ্যুত করা দলের নেতারা নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন। বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েও কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সরকারদলীয় নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে। এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চলমান এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের পদধারী জনপ্রতিনিধিরাও ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গৌরীপুরে অনেকটা কঠোরভাবে পালন করে ছাত্র-জনতা। এ আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো উপজেলা। এতে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনের মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
বক্তব্য নেওয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বেশিরভাগেরই মুঠোফোন বন্ধ ও কোথাও খোঁজখবর না পাওয়া যাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এমপি বা জেলার শীর্ষ নেতারা কে কোথায় আছেন কেউ জানি না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও নেই। শুধু উপজেলার নেতারাই নন, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে এসব নেতা কেন্দ্রের নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখবেন বলে জানা গেছে।