গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুর হয়ে নেত্রকোণার জারিয়াগামী লোকাল ট্রেনে প্রতিনিয়ত ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। বুধবার ভোরে আবারও ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়ে ট্রেনটি। এসময় ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন কয়েকজন যাত্রী।
১০থেকে ১৫ জনের একটি ডাকাত দল মুখে কাপড় বেঁধে ট্রেনে উঠে দেশি অস্ত্র দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে মুঠোফোন, টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে চলে যান।
এর আগে ১ সেপ্টেম্বর রাতে একই ট্রেনে গৌরীপুর স্টেশন থেকে ময়মনসিংহের উদ্দ্যোশে ছেড়ে আসার পথে বিসকা ও শম্ভুগঞ্জের মাঝপথে ট্রেনটিতেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। একই ট্রেনে বারবার ডাকাতির ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যাত্রিদের মধ্যে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যে জায়গায়গুলোতে ডাকাতি হয়, সে এলাকাটির রেলপথ বাঁকানো ও দীর্ঘ দিনের পুরোনো হওয়ায় ট্রেন ১৬ কিলোমিটার গতিতে চলে। সেখানে যেকোনো মানুষ সহজে ট্রেনে উঠতে ও নামতে পারেন। এই ‘সুযোগে’ ডাকাতি হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ঝাঞ্জাইল স্টেশন পর্যন্ত লোকাল ট্রেন নিয়মিত দিনে চারবার চলাচল করে। ট্রেনটি জারিয়া ট্রেন হিসেবেই পরিচিত।
বুধবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি জারিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু স্টেশনের অদূরে ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী এলাকায় পৌঁছালে ডাকাতের কবলে পড়ে ট্রেনটি।
ডাকাত দলের সদস্যরা মুখে কাপড় বেঁধে ট্রেনে উঠে দেশি অস্ত্র দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে মুঠোফোন, টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যান। এ সময় ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক যাত্রী আহত হন। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন।
ট্রেনের চালক আবদুল হালিম জানান, ট্রেনটি রেল সেতুতে ওঠার আগেই নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণত ট্রেনের গতি কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ডাকাত দল ট্রেনে উঠে পড়ে।
ট্রেনে ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল পৌনে আটটার দিকে ট্রেনটি পূর্বধলায় পৌঁছার পর ছাত্র-জনতা ডাকাতির জন্য ট্রেনের চালক ও গার্ডকে দায়ী করে ট্রেনটিকে আটকে রাখেন।
পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে ট্রেনটি ছাড়ার ব্যবস্থা করে। ওই রেলপথে লোকাল ট্রেনটিকে প্রায়ই ডাকাত দলের কবলে পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। যাত্রিদের অভিযোগ ট্রেনের ভিতরে কোন আলো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাই। রাতের বেলায় ওই ট্রেনের যাত্রিরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে পরিবহন পরিদর্শক মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, ওই এলাকাটিতে বাঁকানো ও পুরো লাইনটা পুরোনো হওয়ার কারণে অনেক দিন ধরে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে ১৬ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আজকের ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য দপ্তরে বার্তা পাঠিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা (ডাকাতেরা) সুযোগ পাচ্ছেন। এখনো তো প্রশাসন ইনঅ্যাকটিভ। আমরা সিভিলিয়ানরা কি করতে পারি, যাত্রী যেমন, আমরাও তেমন।’
তিনি মনে করেন, ঘটনাগুলো ঘটছে সন্ধ্যা বা অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়গুলোতে। প্রশাসন কয়েক দিন টহল দিলে হয়তো এমনটি আর হবে না।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা জায়গাটি ঘুরে দেখেছি। ওই এলাকাতে ট্রেনের গতি খুব কম থাকে। মানুষ খুব সহজে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে পারে ও উঠতে পারেন। সে কারণে ট্রেনের গতি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছি। আমরা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে কার্যক্রম চালাতে পারি না। জেলা পুলিশের তৎপরতা বাড়লে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে।’