গৌরীপু‌রে সরকারি জমিতে আ.লীগ কার্যালয়সহ ১৫৭টি স্থাপনা

সাজ্জাতুল ইসলাম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের পাছার বাজারে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক ভবন, সহনাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়, মনোহারী দোকান, কাপড়ের দোকান, চালের দোকান,
মিষ্টির দোকানসহ গড়ে উঠেছে ১৫৭টি অবৈধ স্থাপনা। ফলে দৈনন্দিন ও সাপ্তাহিক হাটবাজারে কৃষিপণ্য বিপণনের ঠাঁই মিলছে না কৃষকের।
এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল আহমেদের কাছে অভিযোগ করেন উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের পাছার গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে রুহুল আমিন।
তিনি জানান, অবৈধভাবে এলোপাতাড়ি, যে যার মতো ক্ষমতা দেখিয়ে দোকানঘর নির্মাণ করায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। বাজারের ভিতরে কোনো গলিপথ না থাকায় যানবাহন যেতে পারছে না। বাজারের ১৫৭টি দোকানদারের কাছে অবৈধ দখলে রয়েছে প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার জমি।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক ২০১৯ সালে প্রণিত বাজারের একাংশে অবৈধ দখলদারের তালিকায় রয়েছেন সোনাকান্দি গ্রামের মামুদ আলীর ছেলে মো. আব্দুল লতিফের টিনের চৌচালা, হাফবিল্ডিং ঘর রয়েছে রাইশিমুল গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে আপেল মামুদ, দৌলতাবাদের মৃত ইন্নছ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী,
মগল মুন্সির ছেলে আজিজুল হক, বাবুল মিয়া, মৃত এংরাজ আলীর ছেলে হাদিস মিয়া, মীর হোসেন মাস্টারের ছেলে আব্দুল জব্বার, মৃত বিরু চন্দ্রর ছেলে বিজয় চন্দ্র, মৃত নজর আলীর ছেলে সবুজ মিয়া, মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে কামাল হোসেন গং, মৃত আক্তর আলীর ছেলে আব্দুর রেজ্জাক,
আবুল হাসেমের ছেলে আবু সিদ্দিক, মৃত ইছাহাক আলীর ছেলে আব্দুল মুন্নাফ, মৃত মতিউর রহমানের ছেলে জসিম উদ্দিন গং, গোলাম হোসেনের ছেলে আব্দুল আজিজ, দুলু মিয়ার ছেলে জজ মিয়া, মৃত মীর হোসেনের ছেলে সুলতান মিয়া, সোনাকান্দির লালচানের ছেলে তাইজুল ইসলাম, মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে মতি মাস্টার,
মামুদ আলীর ছেলে আবু ছিদ্দিক গং, পাছারের মৃত আছর উদ্দিনের ছেলে সুরুজ আলী মাস্টার, হাছেন আলীর ছেলে আলী আকবর, মৃত সাহেব আলীর ছেলে সুনজু মিয়া, মৃত কুদরত আলীর ছেলে কছিম উদ্দিন,
মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে আব্দুর রাশিদ, মৃত নইমদ্দিনের ছেলে মোসলেম উদ্দিন, আলী আহম্মদের ছেলে আমিনুল ইসলাম, মৃত শামছুদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, মৃত সবুজ মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া,
বড়বহেরাতলার মৃত মিরাজ আলীর ছেলে আবু সাহেদ, লাটুরপায়ার গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে আবু তালেব, ধোপাজাঙ্গালিয়ার মৃত মন্তাজ উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, মৃত কুদরত আলীর ছেলে নবী হোসেন, শাহনেওয়াজ,
মৃত ছামির উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম, মৃত মন্তাজ উদ্দিনের ছেলে সোলমান, মৃত আক্তর আলীর ছেলে শান্ত মিয়া, মৃত আব্দু ছামাদ মাস্টারের ছেলে রায়হান, মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে আবুল কাশেম,
ভালুকার মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে সুরুজ মিয়া, জুগীরডাঙগুরীর হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গফুর, রাইশিমুল গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে রেজাউল সরকার, সহনাটীর মৃত ফজর আলীর ছেলে হেলিম খলিফা, আব্দুল হেলিমের ছেলে আজিজুল হক, মৃত মনফর আলীর ছেলে হাসেম, আওয়ামী লীগ অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা অফিস।  এছাড়া বাজারের ভিতরে ও রাস্তার পাশে রয়েছে ১০৭টি অবৈধ দোকানপাট।
এ অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল আহমেদ। তিনি জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সরেজমিনে গি‌য়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে গাড়ি থেকে মাছ নামানো হচ্ছে। বাজারের রাস্তায় দোকানপাট থাকায় গাড়িটি বাজারের ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে না। সহনাটী ইউনিয়ন পরিষদের সড়কের ওপরে কৃষকরা নিত্যপণ্যের পসরা বসিয়েছেন। মূল বাজারে অসংখ্য দোকানপাট থাকায় কৃষক পণ্য নিয়ে নির্ধারিত স্থানে বসতে পারছে না।
সহনাটীর পাট শাক বিক্রেতা কৃষক আরশেদ আলী জানান, সবাই তো দোকান খুলে বসেছেন, আমাদের ঠাঁই নেই। তাই রাস্তার ওপরেই বসতে হচ্ছে।
কচু বিক্রেতা আব্দুল জলিল, মুখীকচু বিক্রেতা আল আমিন, লাউশাক বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন জানান, কৃষকের পণ্যের বাজার এখন মালিকানা হয়ে গেছে। সহনাটীর হারুন অর রশিদ জানান, যে যার ইচ্ছে মতো দোকান নির্মাণ করছে। ভূমি অফিসের সামনে এ বিভাগের তৎকালীন কর্মকর্তাদের খুশি (ঘুস দিয়ে) করেই দোকানঘর তোলা হয়েছে। তাই তারা কাউকে বাধা দেয়নি।
বাজারে এলোপাতাড়িভাবে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেন সহনাটী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ফিরোজ কবির। তিনি জানান, পাছার বাজারটি ১ একর ৮১ শতাংশ ভূমিতে অবস্থিত। ইতোপূর্বে দখলদারদের চিহ্নিত করে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রুহুল আমিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয় যে তথ্য জানতে চেয়েছিলেন, সে বিষয়েও প্রতিবেদন প্রদান করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *