জীবননগর অফিস:-
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আফ্রিকা দেশের ড্রাগন ফলের চাষ এখন চুয়াডাঙ্গার৷ সীমান্তবর্তী জীবননগর৷৷ উপজেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে।
পাশাপাশি মাল্টা ও পেয়ারার চাষও হচ্ছে সমান তালে উপজেলার প্রতিটি মাঠে এখন ড্রাগন,মাল্টা ও পেয়ারার আবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে ড্রাগন,মাল্টা ও পেয়ারা আবাদে।এবার চাষী ও ক্ষুদ্র-প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের পাইকারি হাট বসেছেউ পজেলার উপ-শহর পিয়ারাতলায়।
প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ড্রাগন,মাল্টা ও চাষিরা জীবননগর পিয়ারাতলা বাজারের আড়তে নিয়ে আসছে তাদের উৎপাদিত ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলের বাজার চলে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত।
এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকার ড্রাগন,মাল্টা ও পেয়ারা বেচাকেনা হয় বলে ফল ব্যবসায়ী ও চাষিদের দাবী। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে উদ্বোধন করা এ হাটে শত কোটি টাকার মাল্টা ও ড্রাগন কেনাবেচা হবে।
চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়,জীবননগর উপজেলায় প্রতি বছরই প্রতিটি গ্রামের মাঠে মাঠে ড্রাগনের আবাদ বাড়ছে।
ড্রাগন চাষে ঝামেলা কম ও লাভ বেশি হওয়ায় উপজেলার চাষিবা দিন দিন এ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।
উপজেলার কাশিপুর মাঠপাড়ার গ্রামের ড্রাগন ইয়াসিন আলী বলেন, প্রথমদিকে ড্রাগন চাষ পরিক্ষামুলক শুরু করলেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৫বিঘা জমিতে ড্রাগনের আবাদ করেছি। বাগানের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফল উৎপাদনও
বাড়তে শুরু করেছে।
প্রতাবপুর গ্রামের কৃষক চাষী রমজান বলেন, প্রথমদিকে প্রতি বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে ফল যদি ভালো হয় প্রথম বছরেই খরচের টাকা ওঠে যাবে।
উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামের মাল্টা চাষি আবুল কাশেম মুন্সী বলেন,দুই বছর আগে মাল্টা চাষ শুরু করি। প্রথমদিকে অল্প পরিসরে মাল্টার আবাদ করলে বর্তমানে আমার ৫ বিঘা জমিতে মাল্টার অবাদ রয়েছে।চলতি বছর ফলনও ভাল আবার দামও মোটামুটি সন্তোষজনক। আমাদের এলাকায় এখন প্রায় সব গ্রামেই কম বেশী মাল্টা ও ড্রাগনের চাষ হচ্ছে।
চাষিদের জন্য সুখের খবর হচ্ছে চলতি বছর থেকে পিয়ারাতলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে ড্রাগন ও মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের হাট সৃষ্টি হওয়ায়।
এ হাটের কারণে চাষিদেরকে উৎপাদিত ড্রাগন,মাল্টাসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করতে বাড়তি ঝামেলা ভোগ করতে হচ্ছে না। অন্যদিকে টাকা প্রাপ্তিরও নিশ্চয়তা রয়েছে।
মাল্টা চাষি আব্দুল মান্নান বলেন,মাল্টা ও ড্রাগন চাষ লাভজনক হওয়ায় এবং এ চাষে ঝুঁকি কম থাকায় দিন দিন চাষিরা মাল্টা চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। আমার চলতি বছর ৪ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ রয়েছে। ফলন ও দাম দুটোই ভাল পাচ্ছি।
পিয়ারাতলা ড্রাগন হাটের মামা-ভাগ্নে ফল ভান্ডারের মালিক রহুল আমিন লিটন বলেন,চলতি বছর থেকে এ হাটের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ হাট চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ। কারণ এ হাটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা
থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা সুলভ মুল্যে মালামাল ক্রয় করতে পারেন।
অন্যদিকে চাষিদেরও কোন ঝামেলা ভোগ করতে হয় না। ব্যবসায়ী ও চাষিদের মধ্যে এক ধরনের সেতু বন্ধন সৃষ্টি হওয়ায় চলতি বছরেই ড্রাগন ও মাল্টা ব্যবসা জমে উঠেছে।
জীবননগর পিয়ারাতলা ফল বাজার কমিটির আহবায়ক হাসান আলী বলেন,এ বাজারে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার ড্রাগন,মাল্টা ও পেয়ারা বেচাকেনা হয়ে থাকে।
এ বাজারে ব্যবসায়ী ও চাষিদের জন্য সব ধরনের অনুকুল পরিবেশ থাকায় দিন দিন বাজারটি জমে উঠছে। আমাদের এ বাজারে ব্যবসায়ী ও চাষিদের কোন ভোগান্তি পেতে হয় না।
পিয়ারাতলা ফল বাজার কমিটির সদস্য সচিব সরোয়ার হোসেন বলেন,আমার বাজার নতুন হলেও প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ড্রাগন,মাল্টা ও পেয়ারা বেচাকেনা হয়ে থাকে। শুধু জীবননগর নয়,আশেপাশের জেলা থেকেও চাষিরা এ বাজারে তাদের উৎপাদিত ড্রাগন,মাল্টা ও পেয়ারা বিক্রি করতে আসে।
এ বাজারটি মুল শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে হলেও বাজারটি উপ-শহর এলাকায় হওয়ায় এখানে ব্যবসায়ীদের
সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, চলতি বছর জীবননগর উপজেলায় ২৮৯ হেক্টর,মাল্টা ১৫৯ হেক্টরে এবং পেয়ারা এক হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জীবননগর শহরের অদুরে উপ-শহর খ্যাত পিয়ারাতলা বাসস্ট্যান্ডে চলতি বছর ফল বাজার সৃষ্টি হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কোন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে না।
চাষিরা সহজের তাদের বাগানে উৎপাদিত ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফল বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের জন্যও মার্কেটটি অনুকুল হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কোন ভোগান্তি ছাড়াই মাল কেনাবেচার সুযোগ পাচ্ছেন। পিয়ারাতলা ফল মার্কেটটি আসলে চাষি ও ব্যবসায়ী সকলের জন্যই ভাল বলে শুনছি।