আবু সাইদ শওকত আলী,ঝিনাইদহ জেলাপ্রতিনিধি:-
শুক্রবার (১৩ ই ডিসেম্বর ও ২৮শে অগ্রহায়ণ)রাত্র ১১.৩০ ঘটিকা। মানুষের কোলাহল ,ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে অন্যরকম এক দৃশ্যের।
পুকুর পাড়ে বড় বড় হাঁড়িতে পাকানো হচ্ছে খাসির মাংস অন্য দিকে চুলায় চলছে ডাল পাকানোর উৎসব। পাশেই সারি সারি বসানো আছে মাটির পাত্র যেটাকে এলাকার ভাষায় মালসা বলা হয়। পাশেই পলিথিন দিয়ে ছোট্ট তিনটি ঘর।
যে তিনটি ঘরের মধ্যে বসে আছে তিনজন ব্যক্তি (লালচাঁদ ফকির, মন্টু বিশ্বাস ও মোতালেব ফকির)। যাদেরকে এই অনুষ্ঠানের অভিভাবক বানানো হয়েছে।
অন্যদিকে নারী পুরুষ বয়োবৃদ্ধ সহ শিশুরা থালা পেতে লাইন দিয়ে বসে আছে।
দেখা গেল আর একদল মানুষ জিকির করতে করতে গ্রামের দিকে এগিয়ে চলেছে।
জিকিরে উচ্চারিত হচ্ছে রবকুল রব্বানী, ফাতেমা জননী, করিম রহিম নামগো তোমার আল্লাহ খাঁচায় বসে ডাকছে পাখি আল্লাহ আল্লাহ।
এর মধ্যে কয়েকজনকে বসে হিসাব করতে দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে মনতাজ আলী কে জিজ্ঞাসা করা হলো,
ভাই এখানে কি হচ্ছে? উত্তরে তিনি প্রতিবেদক কে জানালেন, এখানে মাঠের সিন্নি হচ্ছে।
জিজ্ঞাসা করা হলো মাঠের সিননি কি? উত্তরে তিনি বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন।
মাঠের সিন্নি হচ্ছে গ্রামের মানুষকে মহামারী দুর্যোগ থেকে বাঁচাবার জন্য প্রতিবছর আমরা এই সময়ে এই মাঠের সিননি করে থাকি।
এই মাঠের সিন্নি কবে থেকে করেন জানতে চাইলে বলেন, বহু পুরাতন এই নিয়ম আমাদের বাপ-দাদারা করে আসছেন সেই সুবাদে আমরাও করতেছি।
কবে থেকে শুরু হয়েছে এর সঠিক কোন তথ্য আমাদের জানা নাই। ছোট ঘরে বসে থাকা মন্টু বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসা করা হলো মানুষ জিকির করতে করতে কোথায় গেল?
উত্তরে বললেন, গ্রামে সাত জায়গায় মাজার অথবা দরগা আছে এখানে জিকির দল যাবে এবং আযন দিবে।
দেখা গেল জিকির দল ফিরে এসে ঘটনা স্থলে আবার একটি আযান দিল। এরপর রান্নাও শেষ।
পরে থালা পেতে লাইন দিয়া বসে থাকা মানুষগুলোকে খাবার পরিবেশন করা হলো। কথিত আছে এই খাবার এখানে বসেই খেতে হবে।
গ্রামের দিকে নিলে নাকি ঐ মানুষের রোগবালাই সহ মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
এমন এ ঘটনার দেখা মিলেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্স এর ভিতর।
বলুহার গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রত্যেক বছর এ সময় মাঠের ছিন্নি অনুষ্ঠিত হয়।
এ ব্যাপারে কোট চাঁদপুর কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ বাহা উদ্দিন এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হয় ইসলামে এর কোন বৈধতা আছে কিনা?
তিনি জানান, কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কাজ কোনভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। আবার খেয়াল করতে হবে ছিন্নি করতে গিয়ে শিরক না হয়।
তবে অনেক আগে চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় মহামারী হলে মানুষ মারা যেত। আমার মনে হয় এসব বাদ দিলে এখন আর অসুবিধা হওয়ার কথা না।