সাজ্জাতুল ইসলাম,গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) :
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে হাট বাজারগুলোতে সবজির দর ঠেকেছে তলানিতে। এক হালি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র বিশ টাকায়। মাথায় হাত কৃষকের, উঠছে না উৎপাদন খরচ। এতে লাভের আশায় শীতকালীন সবজির চাষ করে এখন বিপাকে কৃষক।
সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার গৌরীপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় সবজির হাট বসে পৌর শহরের মধ্যবাজারে। এ হাটের পাইকারি বাজারে শায়েস্তা খাঁর যুগের মতোই ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে বিশ টাকা হালি।
শনিবার (০৪জানুয়ারী) গৌরীপুর সাপ্তাহিক পৌর হাটসহ বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। পৌষের মাঝপথে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বাড়ছে শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ। দোকানিরাও এর পসরা সাজিয়ে বসছেন। এতে দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কোনো কোনো শাক-সবজির দাম। সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমবে।
মূলত উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারে পর্যাপ্ত সবজি আসায় দাম একেবারে পড়ে গেছে। আবাদের খরচ না উঠলেও বাধ্য হয়ে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।
তারা বলেন, সবজির পাইকারি বাজারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে দাম। ফুলকপির হালি (চার পিস) বিশ টাকা ও মুলা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা কেজি। এছাড়াও বাঁধাকপি, মিষ্টি লাউ, সিম ও বেগুনসহ সব রকমের শীতকালীন সবজি ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার গৌরীপুর হাটে ফুলকপি বিক্রি করতে আসা কৃষক আব্দুল রারেক বলেন, বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে তাদেরই খাওয়াতাম।
উৎপাদন খরচ বাদ দিলাম, মাঠ থেকে হাট পর্যন্ত নিয়ে আসতে কেজি প্রতি যে খরচ সেই টাকাও আমরা পাচ্ছি না। ফুলকপির মতো সবজি মাত্র পাচ টাকা পিস কখনো বিক্রি হতে পারে?
আরেক কৃষক অচিন্তপুরের রহমত উল্লাহ্য বলেন, প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে ফুলকপি চাষ করে। কৃষকদের জ্বালা কেউ বোঝে না। কাউকে বলতেও পারছি না সহ্যও করতে পারছি ন।
এদিকে ব্যাপারীরা বলছেন, লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরও। পাইকারি বাজারে গড়ে সবজির দাম ৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। যেখানে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি ও মুলা।
টাঙ্গাইল থেকে আসা সবজি ব্যাপারী আরিফ জামান বলেন, দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসাতে ধস নেমেছে। কেজি প্রতি আগে ভালো লাভ থাকলেও এখন গায়ে গায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাদ দিলে কোনো লাভই থাকছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পটোল ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, গাজর ৩৫-৪০ টাকা,
ক্ষিরাই ৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশি পাকা টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শিম ২০ টাকা, শালগম ২০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০ টাকা,
পেঁয়াজের কলি ২০ টাকা, পাতাসহ পেঁয়াজ ৩০, নতুন আলু ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, ব্রকলি ৩০-৪০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও।
খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। এছাড়া, বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২৫-৩০ টাকা, লাউশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।
গৌরীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, এই উপজেলায় এবার সবজি চাষ বেশি হয়েছে। ফলে বাজারে সবজি সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা কম। আর ক্রেতা কম থাকায় বাজারে সবজিটির দাম পড়ে গেছে।