কোটচাঁদপুরে উপজেলা জুড়ে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে, নেই কোনো অনুমোদন প্রশাসনের নিরবতা 

আবু সাইদ শওকত আলী, ঝিনাইদহ:-

ঝিনাইদহের  কোটচাঁদপুর  উপজেলা  জুড়ে  মাটি  কাটার মহোৎসব চললেও জানেন না উপজেলা প্রশাসন।

স্পেসিফিক তথ্য চাইলেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা জুরে মাটি কাটা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।
দিনের  বেলায়  দেখা মেলে  দুই এক  জনের কৃষি জমির টপ সয়েল কাটতে। লেবার দিয়ে হেডলোডে ট্রাক্টরের টলি বোঝাই করে মাটি নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে।

তবে রাত হলেই সক্রিয়  হয়ে ওঠেন মাটি কাটা সিন্ডিকেটের সদস্যরা। রাত ১০টা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত অবৈধভাবে চলে মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ।

ট্রাক্টরের  শব্দে অতিষ্ঠ  মানুষ, পাকা  রাস্তায়  মাটি পরে হচ্ছে বেহাল দশা , ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমি, পুকুর সংস্কারের অজুহাতে বিক্রি করছে লাখ লাখ টাকার মাটি।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এভাবে এক্সক্যাভেটর (ভেকু) দিয়ে কৃষিজমির উপরিভাগের ও পুকুর সংস্করের নামে মাটি কেটে নিচ্ছেন চক্রের সদস্যরা।

উর্বর মাটি ইটভাটাসহ  বিভিন্ন  স্থান ভরাটের  কাজে  বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসব পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ পাকা সড়ক সহ হাইওয়ে সড়ক।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হবে । মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার জন্য। এরপর দিনের বেলায় চক্রের সদস্যরা নিষ্ক্রিয় থাকলেও রাতের বেলায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন কৃষক। এসব ফসল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। পাট, পেঁয়াজ,

আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, ধানসহ নানান ধরনের ফসলের আবাদ করেন তারা। তবে মাটি কেটে নেওয়ায় প্রতি বছর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এতে কৃষকের দীর্ষস্থায়ী ক্ষতি হলেও মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন  দেখা গেছে, উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের ধানের জমি থেকে লেবার দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।

জমির মালিক রাঙ্গিয়ারপুতা গ্রামের স্কুল শিক্ষকের ভাষ্য, তার পাশের জমির মাটি কেটে বিক্রি করার কারণে তার জমি উঁচু হয়ে গিয়েছে। তাই মাটি কাটছে।

তিনি ডিসি অফিস থেকে অনুমোদন নেননি বলে জানিয়েছেন। ৪ থেকে ৬টি ট্রাক্টরে এসব পরিবহনের কাজ হচ্ছে।
জায়গাটিতে  আগে সমতল  জমি ছিল  বলে জানান  গ্রামের কৃষক রফিক হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের লোকজন বাধা দিয়ে কি করবে।

কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের সহযোগিতা করছে। পর্যায় ক্রমে আশপাশের সব জমির মাটি কাটতে হবে। তা না হলে উঁচু নিচু জমিতে আবাদ হবে না।
সলেমানপুর এলাকার মাঠে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাক্টরে তোলা হচ্ছে। ডিসি অফিস থেকে অনুমোদন না নিয়ে মাটি কাটার কাজ করছেন শহরের সলেমানপুর গ্রামের শাহিন রহমান।

তিনি বলেন, মাটি বিক্রি করছেন জমির মালিক। আমি লেবার ঠিক করে দিয়েছি। তবে এ মাটি ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বলুহর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন পৌর এলাকার জামিরুল ও মিলন। কপোতাক্ষ নদ ক্ষননের পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা দরিদ্র কৃষককে নানান  প্রলোভন  দেখিয়ে উর্বর  অংশের  মাটি কিনে নিচ্ছেন। অসচেতনতায় অনেকে নগদ অর্থ পেতে বিক্রি করছেন।

কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রলি। এতে  গ্রামীণ পাকা  সড়কে মাটির স্তর এবং খানাখন্দ তৈরি হচ্ছে।

একটু বৃষ্টি হলেই ঘটবে দূর্ঘটনা বাড়বে দূর্ভোগ। ট্রলি চলাচল করায় আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের ভোমরাডাঙ্গা গ্রামে পুকুর সংস্করের নামে রাত ভোর মাস ব্যাপি ভেকু দিয়ে  মাটি কেটে ইট  ভাটায় বিক্রি করছেন ওই গ্রামের রহিম ও সাইফুল।

ডিসি অফিস থেকে পুকুর সংস্করের অনুমতি নিয়ে কুশনা ইউনিয়নের আমেরিকার জনগণের সহায়তায় তৈরি

আমেরিকান সড়কের পাশে পুকুর সংস্কার করার পাশাপাশি ট্রাক্টর দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করছেন বান্দাল বাজার এলাকার আব্দুল আলিম।

পাশেই পুকুর সংস্কার করছেন সুমন নামে এক জন। তিনি কোনো অনুমতি নেননি। সপ্তাহ ব্যাপি মাটি কেটে বিক্রি করছেন ইটভাটা সহ বিভিন্ন জায়গায়।

তিনি জানান বিভিন্ন সিস্টেম করে কাজ চালাচ্ছেন। ভেকু দিয়ে কাঁঠালিয়া গ্রাম থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন এলাঙ্গী ইউনিয়ন ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম।

সাফদারপুর ইউনিয়নের লক্ষিকুন্ডু গ্রামে ভেকু দিয়ে বালি কাটছেন উকিল নমে একজন।

দোড়া ইউনিয়নের বকুল সিটি পার্কের ভিতরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুকুর থেকে বালি তুলে ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন শাহজাহান আলী।

সিন্ডিকেটের সদস্যরা ট্রাক্টরের লাইট জ্বালিয়ে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মাটি কাটে। প্রতি জায়গায় সাত-আটটি ট্রাক্টর পরিবহনের কাজ করে।

এ বিষয়ে উপজেলা  নির্বাহী অফিসার  উছেন মে’র  কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জানা নেই। সঠিক  তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *