ময়মনসিংহে ই‌ঞ্জিন সংকটে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ, যা‌ত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে

সাজ্জাতুল ইসলাম, গৌরীপুর ( ময়মন‌সিংহ ) :
ময়মন‌সিংহ অঞ্চ‌লে ট্রেনের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) বিকলের ঘটনা যেন এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে চালকদের চোখে-মুখে সর্বদা ভ‌য়ের ছাপ।
ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনায় শিডিউল বিপর্যয় ও যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। ইঞ্জিন–সংকটে ইতিমধ্যে ময়মন‌সিংহ অঞ্চ‌লের সব ক‌’টি লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের কারণে চলাচলের সময় ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। ফ‌লে আপাদত লোকাল ট্রেনগু‌লো চলাচল বন্ধ রাখা হ‌য়ে‌ছে।
বৃহস্প‌তিবার সকা‌লে স‌রেজ‌মি‌নে ময়মন‌সিংহ রেলও‌য়ে ‌স্টেশ‌নে গি‌য়ে দেখা যায়,
ময়মনসিংহ-ঢাকা-জামালপুর, ময়মনসিংহ-গৌরীপুর-ভৈরব,ময়মনসিংহ-গৌরীপুর-জা‌রিয়া-মোহনগঞ্জ রেলপ‌থে কোন লোকাল চলাচল ক‌রে‌নি।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান জানান, একেক দিন একেক জায়গায় একেক ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। এ জন্য ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। হয়রানির শিকার হওয়ায় যাত্রীদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। ফ‌লে ময়মন‌সিংহ থে‌কে চলাচলকারী লোকাল ট্রেনগু‌লো বন্ধ রাখা হ‌য়ে‌ছে।
তি‌নি আ‌রো জানান,ময়মনসিংহ জংশন হয়ে মোট ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।
ট্রেনের ইঞ্জিন সংকটের কারণে ময়মনসিংহ থেকে জা‌রিয়া ও মোহনগঞ্জগামী দুটি লোকাল ট্রেন ও ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরগামী ধলেশ্বরী নামের একটি ট্রেনের চলাচল ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
রেলও‌য়ে ও স্থানীয় সূ‌ত্রে জানা যায়, গত দেড়মা‌সে ময়মন‌সিংহ অঞ্চ‌লে একটি লাইনচ্যুত ও ১৫টি ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘ‌টেছে।
এর ম‌ধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল ও একটি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ময়মনসিংহ জংশন এলাকায় লাইনচ্যুত, চট্টগ্রাম ছেড়ে আসা ভুয়াপুরগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ জংশনে ইঞ্জিন বিকল হয়।
একই দিন ত্রিশালের আউলিয়ানগর এলাকায় ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় এবং জামালপুর ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ জংশনে ইঞ্জিন বিকল হয়।
এছাড়াও একই বছরে এমনই আরেকটি বিড়ম্বনায় পড়ে জামালপুর-চট্টগ্রাম চলাচল করা আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৬)। ২০২৪ সালের ২৪ ‌মে জামালপুর থেকে চট্টগ্রাম যেতে ট্রেনটিতে চারটি ইঞ্জিন ব্যবহার হয়েছিল।
এরম‌ধ্যে জামালপুর থেকে ট্রেনটিকে টেনে আনছিল রেলও ২৯১৯ নম্বর ইঞ্জিন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর স্টেশন এলাকার কাছে ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ থেকে ২৬১৪ নম্বর ইঞ্জিন রওনা করে ট্রেনটি। ওই ইঞ্জিন বিজয় এক্সপ্রেসকে নিয়ে ভৈরব সে উঠতে না পারায় আখাউড়া থেকে ২৯২৩ নম্বর ইঞ্জিন এনে ট্রেনটিকে। নেওয়া হয়।
কিন্তু এই ইঞ্জিনও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা এল গিয়ে বিকল হয়। পরে চট্টগ্রাম থেকে ২৯৩৭ নম্বর ইঞ্জিন এনে চট্টগ্রাম নেওয়া হয় ট্রেনটিকে।
বিশেষ করে মিটারগেজ অনেক ইঞ্জিনের ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে না। অনেক যন্ত্রপাতি প্রায় অকেজো, সঠিকভাবে কাজ করে না ইলেকট্রিক ডিভাইসও।
অধিকাংশ কোচ ও বগিতে ময়লা-দুর্গন্ধ এবং সিটও ভাঙাচোরা।
এককথায় পুরো ট্রেনবহরজুড়ে অব্যবস্থাপনার ছাপ চোখে পড়ে। সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, মানুষভর্তি ট্রেনকে টেনে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ইঞ্জিন।
কিন্তু সেই ইঞ্জিনই যদি চলে জোড়াতালিতে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে ও নিরাপদে যা‌ত্রিরা পৌছা‌বে কিভা‌বে ?
এ‌দি‌কে ময়মনসিংহ লোকোশেডে কর্মরত কয়েকজন কর্মী জানান, ময়মনসিংহ অঞ্চলে চলাচলকারী ট্রেনে ব্যবহার হওয়া ২ হাজার থেকে ৩ হাজার সিরিজের ইঞ্জিনগুলো বহু আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
এর মধ্যে ২ হাজার ২০০ সিরিজ, ২ হাজার ৫০০ সিরিজ ও ২ হাজার ৮০০ সিরিজের ইঞ্জিন রেলপথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ইঞ্জিনগুলো দিয়ে চলছে ট্রেনগুলো।
বিকল হওয়া ট্রেনের ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইঞ্জিনগুলোতে ইঞ্জিনের চাকা ঘোরানোর জন্য যে ট্র্যাকশন মোটর আছে, সেটির ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণেও বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটে।
তারা আ‌রো জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত মালামালের ঘাটতি আছে। স্থানীয়ভাবে মেরামত করার পর আবার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ইঞ্জিনগুলোর কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় মেরামতের পর টেকসই হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন।
ময়মন‌সিংহ লোকোশেড ও জংশন স্টেশনে দুটি বিকল্প ইঞ্জিন সার্বক্ষণিক থাকার কথা থাকলেও বিপর্যয়ের কারণে স্টকে কোনো ইঞ্জিন থাকছে না। ৮১ জন জনবলের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২৯ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতেও সমস্যা হচ্ছে।
গৌরীপুর থেকে ময়মনসিংহ শহরে নিয়মিত যাতায়াত করা শ‌ফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, একটি ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে অন্য ট্রেনগুলোও আটকে থাকে।
একটি ট্রেনের পাশাপাশি অন্য ট্রেনের যাত্রীদেরও ভোগান্তি হয়। ভোগান্তিবিহীন রেলসেবার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *