আমরা সবাই জানি, মানুষ এবং অন্যান্য স্থলচর প্রাণীরা ঘুমিয়ে বিশ্রাম নেয়। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবেছেন, মাছেরা কি ঘুমায়? আমাদের চারপাশের নদী-নালা, পুকুর এবং সাগরের মাছেরা কি কোনোভাবে বিশ্রাম নেয়? এই প্রশ্নটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন এবং তাদের উত্তর হলো—হ্যাঁ, মাছেরাও ঘুমায়! তবে তাদের ঘুমের ধরন আমাদের চেয়ে একেবারেই আলাদা।
মাছের ঘুম আমাদের মতো নয়। আমরা ঘুমাতে গেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ি, কিন্তু মাছেরা তা করতে পারে না। কারণ বেশিরভাগ মাছেরই চোখের পাতা নেই। ফলে তারা চোখ খোলা রেখেই ঘুমায়। ঘুমের সময় মাছেরা কম নড়াচড়া করে, তাদের শরীর স্থির থাকে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হারও ধীর হয়ে যায়। তবে এরা সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়ে না। তাদের স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় থাকে, যাতে কোনো বিপদের হুমকি দেখা দিলে তারা দ্রুত সাড়া দিতে পারে।
মাছের ঘুমের ধরন তাদের প্রজাতি, পরিবেশ এবং জীবনধারার উপর নির্ভর করে। কিছু মাছ স্থির থেকে ঘুমায়, আবার কিছু মাছ ধীরে ধীরে সাঁতার কাটতে কাটতে বিশ্রাম নেয়। উদাহরণস্বরূপ, হাঙরের মতো মাছ সবসময় সাঁতার কাটতে বাধ্য থাকে, কারণ তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য পানির প্রবাহ প্রয়োজন। তবে হাঙরেরাও ঘুমায়, তবে তাদের ঘুমের সময় তারা কম নড়াচড়া করে এবং ধীরে ধীরে সাঁতার কাটে।
অন্যদিকে, কিছু মাছ গভীর ঘুমে ডুবে যায় না। তারা এমনভাবে বিশ্রাম নেয় যে তারা চারপাশের পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয় না। এরা সবসময় সচেতন থাকে এবং প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দিতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ঘুম বা বিশ্রাম প্রত্যেক প্রাণীর জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছেরা ঘুমের মাধ্যমে তাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করে। গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যদি মাছেদের ঘুম বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসে এবং তারা মনোযোগ হারায়। এটা অনেকটা মানুষের ঘুম না পাওয়ার মতোই।
মাছেরা ঘুমানোর সময়ও শ্বাস নেয়, তবে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ধীর হয়ে যায়। অধিকাংশ মাছ পানির ভেতর থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে গিল (gills) এর মাধ্যমে। ফলে তারা স্থির থাকলেও শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয় না।
মাছেরা ঘুমায়, কিন্তু তা আমাদের মতো নয়। তাদের ঘুমের ধরন বিভিন্ন প্রজাতির জন্য আলাদা। কিছু মাছ স্থির থেকে ঘুমায়, আবার কিছু মাছ ধীরে ধীরে সাঁতার কাটতে কাটতে বিশ্রাম নেয়। বিজ্ঞানীদের মতে, ঘুম বা বিশ্রাম প্রত্যেক প্রাণীর জন্যই অপরিহার্য, এবং মাছেদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। তাই পরেরবার যখন আপনি পুকুরের পাশে বসে থাকবেন, মনে রাখবেন—আপনার চারপাশের মাছেরাও তাদের নিজস্ব উপায়ে বিশ্রাম নিচ্ছে!