আবু সাইদ শওকত আলী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:-
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ঋষিপাড়ার বাসিন্দা প্রতিমা রানী অভিযোগ করেছেন, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের চুক্তির টাকা (মাসোয়ারা) না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার।
মাসোয়ারার চুক্তি, না দিলেই মামলা!
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোটচাঁদপুর বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থিত ঋষিপাড়ায় অধিকাংশ মানুষ পরিচ্ছন্নতার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অনেক পরিবার নিজেদের ব্যবহারের জন্য চোলাই মদ প্রস্তুত করলেও পরে তা বিক্রি করতেও বাধ্য হন।
তবে সম্প্রতি এ এলাকায় গাঁজার কারবারও বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ মাদক ব্যবসা একটি চুক্তির আওতায় চলছে,
যেখানে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মাসোয়ারা নিয়ে এই কার্যক্রমের খবর আগেই জানিয়ে দেন।
প্রতিমা রানীর ভাষ্যমতে, ঋষিপাড়ায় ১২টি মাদক স্পট রয়েছে, যার মধ্যে ৮টি চোলাই মদের এবং ৪টি গাঁজার স্পট।
এসব থেকে মাসোয়ারা বাবদ প্রতি মাসে ৮৪ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়।
তিনি জানান, গাঁজা বিক্রি করার সময় তাকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা দিতে হতো, যা চারটি স্পট থেকে মোট ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠত।
বাকি ২৪ হাজার টাকা চোলাই মদের স্পট থেকে নেওয়া হতো।
প্রতিমা রানী অভিযোগ করেন, আগে আলতাপ হোসেন এসব টাকা নিতেন, পরে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান ও আব্দুর রশিদ দায়িত্ব নেন।
তারা মাসোয়ারা পেলে অভিযানের আগেই ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিতেন,
কিন্তু টাকা না দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন।
ব্যবসা বন্ধের পরও মামলা!
প্রতিমা রানী জানান, কয়েক মাস আগে তিনি মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
তার অনুপস্থিতিতে তার মেয়ের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক এক অভিযানে তার ঘরে কিছু না পেলেও ৩শ গ্রাম গাঁজা দেখিয়ে তাকে নতুন করে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার, তদন্তের আশ্বাস
তবে পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান ও আব্দুর রশিদ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেবলেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আমাদের সঙ্গে ঋষিপাড়ার কারও কোনো আর্থিক লেনদেন নেই।”
এ বিষয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার বলেন, “যদি যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ করা হয়,
তাহলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি
কোটচাঁদপুরের স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগী পরিবার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।