শবে বরাত: করণীয় ও বর্জনীয় আমল

শবে বরাত: করণীয় ও বর্জনীয় আমল

শবে বরাত, যা আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ নামে পরিচিত, ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। অনেকে এ রাতকে গোনাহ থেকে মুক্তি ও কল্যাণের রাত হিসেবে মনে করেন। তবে, এ বিষয়ে বিভিন্ন হাদিস ও ইসলামী চিন্তাবিদদের ব্যাখ্যা রয়েছে। তাই শবে বরাত পালনের ক্ষেত্রে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা এবং বিদআত ও কুসংস্কার থেকে দূরে থাকা জরুরি।


শবে বরাতে করণীয় আমল:

১. নফল নামাজ আদায় করা:
শবে বরাতে ব্যক্তিগতভাবে নফল ইবাদত করা যেতে পারে। তবে, এ রাতের জন্য বিশেষ কোনো নামাজ নির্দিষ্ট করা নেই।

  1. কুরআন তিলাওয়াত করা:
    এ রাতে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে।
  2. দোয়া ও ইস্তিগফার করা:
    এ রাতে আল্লাহর কাছে নিজের ও সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উত্তম।
  3. দরুদ শরিফ পাঠ করা:
    রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে, যা শবে বরাতেও পালন করা যেতে পারে।
  4. তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির করা:
    আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ স্মরণ করা, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি বেশি পরিমাণে পাঠ করা উচিত।
  5. নফল রোজা রাখা:
    রাসুল (সা.) শা’বান মাসে বেশি রোজা রাখতেন (তিরমিজি ৭৩৭)। তবে শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ কোনো রোজার বিধান নেই।
  6. কবর জিয়ারত করা:
    রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতেন এবং মুমিনদের জন্য দোয়া করতেন। তবে কবরস্থানে গিয়ে কোনো বিশেষ আয়োজন করা বিদআত।
  7. সদকা ও দান করা:
    এ রাতে দান-খয়রাত করা সওয়াবের কাজ।

শবে বরাতে বর্জনীয় আমল:

  1. বিশেষ খাবার আয়োজন করা:
    শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ ধরনের খাবার তৈরি করা এবং তা বাধ্যতামূলক মনে করা বিদআত।
  2. ফটকা-আতশবাজি ফোটানো:
    আনন্দ প্রকাশের জন্য পটকা-আতশবাজি ফোটানো ইসলামে অনুচিত ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
  3. গোসলকে গোনাহ মাফের মাধ্যম মনে করা:
    কেউ কেউ শবে বরাতে বিশেষভাবে গোসল করেন, যা ইসলামসম্মত নয়।
  4. কবরস্থানে আলোকসজ্জা ও মোমবাতি জ্বালানো:
    কবরে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালানো ও গোলাপজল ছিটানো বিদআত এবং অমূলক বিশ্বাসের ফল।
  5. বাড়ি-ঘর আলোকসজ্জা করা:
    শবে বরাত উপলক্ষে ঘর বা মসজিদে আলোকসজ্জা করা কুসংস্কারপূর্ণ কাজ।
  6. গণজমায়েতে বিশেষ নামাজ পড়া:
    শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো জামাআত বা নামাজের বিধান নেই। তাই মসজিদে বিশেষ নামাজের আয়োজন করা বিদআত।
  7. বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি করা:
    কেউ কেউ শবে বরাতকে অতিরঞ্জিতভাবে পালন করেন, আবার কেউ একেবারেই অস্বীকার করেন। উভয় চরমপন্থা থেকে দূরে থাকা উচিত।

উপসংহার:

শবে বরাত ইবাদতের রাত। তবে, এতে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা জরুরি। বিদআত ও কুসংস্কার থেকে বিরত থেকে, ব্যক্তিগতভাবে ইবাদতে মনোযোগী হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন এবং সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *