আবু সাইদ শওকত আলী,ঝিনাইদহ:-
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে নির্মম এক ঘটনায় সৎ মায়ের দেওয়া বিষক্রিয়ায় প্রাণ হারিয়েছে মাত্র পাঁচ বছর বয়সী শিশু মাহমুদা খাতুন।
সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
ঘটনার পেছনের নির্মম সত্য
কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শাহিন মণ্ডলের মেয়ে মাহমুদা।
জানা গেছে, গত ১ মার্চ সন্ধ্যায় তার সৎ মা হুমাইরা খাতুন কোমল পানীয়ের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে তাকে পান করান।
বিষক্রিয়ার কারণে শিশুটির শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হলে তাকে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর শিশুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হলে গতকাল তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়।
পরিবারের হৃদয়বিদারক বর্ণনা
শিশুটির বাবা শাহিন মণ্ডল বলেন,“মেয়ে নিজেই জানায় তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। কে খাইয়েছে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, তার সৎ মা হুমাইরা খাতুন কোমল পানীয়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাকেখাইয়েছে।”
শিশুটির দাদি সকিনা বেগম জানান,“মাহমুদার জন্মের সময় তার মা আফরোজা খাতুন মারা যান। সেই থেকে আমি তাকে লালন-পালন করে আসছিলাম।
ওর বাবা বিদেশে থাকাকালীন মোবাইলে হুমাইরাকে বিয়ে করে এবং এক মাস আগে দেশে ফিরে তাকে বাড়িতে আনে।
হুমাইরা কখনোই মাহমুদাকে ভালো চোখে দেখেনি, কিন্তু সে যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা ভাবতেও পারিনি। আমি হুমাইরার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
গ্রামজুড়ে ক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ
এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিশুটির হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী। তবে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত হুমাইরা খাতুন পলাতক রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আল ইমরান জুয়েল জানান,“শিশুটির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন ছিল।
বিষের প্রভাব তার মুখ থেকে পাকস্থলি পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।”
এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর মডেল থানার ডিউটি অফিসার এসআই শারমিন আক্তার বলেন,“চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মাধ্যমে আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি।
ওসি স্যারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। “এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।