চৌগাছায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর আঘাতে স্ত্রী নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক:-

যশোরের চৌগাছায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে স্বামীর মারধরে স্ত্রী রেকসোনা খাতুন (৩৫) নিহত হয়েছেন। সোমবার (১১ মার্চ) সকালে উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ঘটনার বিবরণ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণপুর গ্রামের সিজার ওরফে রাকিব প্রায় ১০-১২ বছর আগে পেটভরা গ্রামের নাজমা খাতুনকে বিয়ে করেন।

তাদের সংসারে একটি সন্তান রয়েছে।

তবে দাম্পত্য কলহের কারণে নাজমা কয়েক বছর আগে বাবার বাড়িতে ফিরে যান এবং বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

এরপর সিজার দ্বিতীয় বিয়ে করেন আন্দুলিয়া গ্রামের রেকসোনা খাতুনকে। শুরুতে তাদের সংসার ভালো চললেও প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ হতো।

সোমবার সকালে প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানকে কেন্দ্র করে রেকসোনার সঙ্গে স্বামীর তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।

একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে সিজার বাড়িতে থাকা একটি ৫-৬ ফুট লম্বা বাঁশের লাঠি দিয়ে স্ত্রীকে আঘাত করতে থাকেন।

এ সময় রেকসোনা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তার হাতে, মাথায় ও চোখের ওপর গুরুতর আঘাত লাগে। একাধিক আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত

গ্রামের চৌকিদার জামাত আলী জানান, “প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

ঘটনার দিনও দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। আমি জেনেছি, একটি বড় বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করার ফলে রেকসোনা নিহত হন।”

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন,

“আমি শুনেছি, পারিবারিক কলহের জের ধরে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য

চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন,

“নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

অভিযুক্ত স্বামী সিজার ওরফে রাকিব পলাতক রয়েছেন, তবে তাকে দ্রুত আটকের চেষ্টা চলছে।”

সামাজিক অবক্ষয়ের প্রভাব

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৯ মার্চ) ভোরে উপজেলার পাতিবিলা গ্রামে ছেলের হাতে বাবা খুন হন। দুই দিনের ব্যবধানে চৌগাছায় আরেকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।

স্থানীয়দের মতে, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়ায় এ ধরনের সহিংসতা বাড়ছে।

সামাজিক অবক্ষয় রোধে সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *