কোটচাঁদপুরের নিম্নবিত্ত পরিবারের সাইফুল, যার ডাক্তার হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা সেই মহীয়সী নারী

আবু সাইদ শওকত আলী,নিজস্ব প্রতিবেদক:-

সফলতার পেছনে থাকে কারও না কারও অবদান, কেউ সামনে আসে, কেউ থেকে যায় নেপথ্যে।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান মোঃ সাইফুল ইসলাম আজ একজন চিকিৎসক।

তবে তার এই সাফল্যের গল্প শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রামের নয়, বরং এর পেছনে আছেন এক মহীয়সী নারী—সালমা আখতার জাহান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব।

তার অনুপ্রেরণা ও সহায়তায়ই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেয়েছে সাইফুলের।

স্বপ্ন দেখা সহজ, বাস্তবায়ন কঠিন

সাইফুল ইসলামের বাবা মোঃ আলী আকবর ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার।

কিন্তু নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়ায় উচ্চশিক্ষার ব্যয় মেটানো তার পরিবারের পক্ষে ছিল অসম্ভব।

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন যেন অর্থের কাছে হারিয়ে যাচ্ছিল।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সরকারি মেডিকেলে চান্স না পাওয়ায় সাইফুলের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছিল।

অন্যদিকে, প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না তার পরিবারের।

এমন সংকটের সময় আল্লাহর রহমতে আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়ান সালমা আখতার জাহান ম্যাম

একজন পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় সালমা আখতার জাহান

সে সময় সালমা আখতার জাহান ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব।

সাইফুল যখন গাজী মেডিকেল কলেজের “দরিদ্র ও মেধাবী” কোটায় আবেদন করে, তখন তিনি তার পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে তাকে বিনা খরচে ভর্তি নেওয়ার সুপারিশ করেন।

যেখানে ভর্তি ফি জোগাড় করাও সাইফুলের পরিবারের জন্য কঠিন ছিল,

সেখানে তার সম্পূর্ণ মেডিকেল পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করেন সালমা আখতার জাহান।

শুধু ভর্তি নয়, পাঁচ বছরের প্রয়োজনীয় বই, পরীক্ষার ফি, আনুষঙ্গিক খরচ—সবকিছুই তিনি ব্যবস্থা করে দেন।

সাফল্যের গল্প ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ

ডাক্তার হওয়ার পরও সাইফুল সালমা আখতার জাহানকে ভুলে যাননি।

তিনি বলেন, “এতোদিন পরে তার সাথে দেখা করতে গেলে বুঝতে পারলাম, তার ভালোবাসা ও স্নেহ এতটুকু কমেনি।

আমার আজকের সাফল্যের পুরো কৃতিত্বই সালমা আখতার জাহান ম্যামের।”

তিনি আরও বলেন, “আমার এক মা জন্ম দিয়েছেন, আর আরেক মা আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

শুধু আমি নই, আমার মতো আরও অসংখ্য দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে ম্যাম সহায়তা করেছেন।

কিন্তু দুঃখজনক হলো, এত সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান একজন কর্মকর্তা হয়েও তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত এসেই অবসরে যেতে বাধ্য হন।

যেখানে এমন মানুষদের সরকারের সর্বোচ্চ পদে থেকে দেশসেবা

করার সুযোগ দেওয়া উচিত, সেখানে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি।”

একজন মানবিক প্রশাসকের উদাহরণ

সালমা আখতার জাহান শুধুমাত্র একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, তিনি একাধিক শিক্ষার্থীর জীবনে আশার বাতিঘর।

সাইফুল ইসলামের মতো আরও অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণে তার অবদান অমূল্য।

সাইফুলের বর্তমান পরিচিতি

বর্তমানে ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের এফসিপিএস (পার্ট ১) উত্তীর্ণ চিকিৎসক।

তিনি তার পথপ্রদর্শক সালমা আখতার জাহানের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ এবং তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য দোয়া করেন।

এই গল্প প্রমাণ করে, একজন মানুষের সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণা কীভাবে আরেকজনের জীবন বদলে দিতে পারে।

এমন মহৎ হৃদয়ের মানুষদের যথাযথ সম্মান জানানো আমাদের সবার দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *