ঝিনাইদহে তৃণমূলে বিএনপি-জামায়াত মুখোমুখি, নারী কর্মীদের ওপর হামলায় উত্তেজনা

গঞ্জেরখববর প্রতিবেদক:-

জাতীয় রাজনীতিতে একসঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করলেও ঝিনাইদহের তৃণমূলে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ছোটখাটো ঘটনা থেকে শুরু করে হামলার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠছে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুই দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে বিব্রত জেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব।

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে গেল গত শনিবার (৮ মার্চ)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রামে জামায়াতের নারী কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

নারী কর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতার

এ ঘটনায় জামায়াতের নারী কর্মী হাসিনা খাতুন বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করে মহেশপুর থানায় মামলা করেন।

অভিযোগে বলা হয়, কুল্লোপাড়া গ্রামের খায়রুল ইসলামের বাড়িতে নারী কর্মীদের সমাবেশ চলছিল।

এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি সমর্থক সেখানে হামলা চালায়। হামলায় হাসিনা খাতুনসহ কয়েকজন আহত হন।

জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হামলার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় হায়াত আলীর ছেলে ঝুমুর, ওমর আলীর ছেলে আল-আমিন,

আব্দুল কাদেরের ছেলে সোহেল, আব্দুল লতিফের ছেলে সাহেব আলী এবং ফকির মিয়ার ছেলে আশরাফুল।

এই হামলার প্রতিবাদে জামায়াত একের পর এক নারী সমাবেশের আয়োজন করে।মঙ্গলবার মহেশপুর সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের নারী কর্মীরা বড় ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ করে, যা স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে।

অবশেষে, মঙ্গলবার রাতে মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রাম থেকে সোহেল হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তিনি বিএনপি সমর্থক এবং ওই হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন ও পাল্টা অভিযোগ

এ ঘটনার পরপরই মহেশপুর উপজেলা বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে।

বিএনপি নেতারা বলেন, জামায়াত তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে মতবিরোধ শুধু মহেশপুরেই নয়, ঝিনাইদহের অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে।

ভিজিএফ কার্ড বিতরণ নিয়ে উত্তেজনা

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে জামায়াত নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদে চড়াও হন।

তারা বিএনপি নেত্রী ও ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আম্বিয়া খাতুন লাকির ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।

এ সময় ইউনিয়ন জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আকরাম ও সেক্রেটারি ইউনুস আলী উপস্থিত ছিলেন।

বাজার কমিটি গঠন নিয়েও মতবিরোধ

এছাড়া, সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নে বাজার কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের মধ্যে মতবিরোধ চরমে পৌঁছায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়।

জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই।

তৃণমূলে কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিছু মহল আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।”

অন্যদিকে, ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আওয়াল বলেন,

“আমরা রাজপথে একসঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই করেছি। বিএনপির সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে কিছু ফ্যাসিস্ট শক্তি বিভিন্ন দলে ঢুকে আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে।”

উপসংহার

ঝিনাইদহের তৃণমূলে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই বিরোধ দুই দলের রাজনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

তৃণমূলের বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য ধরে রাখা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশাসনের তৎপরতার পাশাপাশি দুই দলের অভ্যন্তরীণ সমঝোতার ওপর নির্ভর করবে এই পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ গতিপথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *