আবু সাইদ শওকত আলী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:-
দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।
এই উপজেলার ২০৬টি গ্রামে প্রায় ৪ লাখের বেশি মানুষের বসবাস।
কিন্তু বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলায় মাত্র একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, যা জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
ফলে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
জনবল সংকট ও চিকিৎসার অভাব
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৬ জন।
এর মধ্যে অধিকাংশ সময় চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে ব্যস্ত থাকেন, ফলে সরকারি হাসপাতালের রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পান না।
জরুরি রোগীদের ক্ষেত্রেও দ্রুত যশোর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল বা অন্যত্র রেফার করা হয়, যা সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বাড়তি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ৫টি পদ থাকলেও কেউ নেই, ফলে হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৩টি পদের মধ্যে ২টি পূরণ রয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৩ জনের স্থলে আছেন মাত্র ১ জন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৯ জনের মধ্যে ৬ জন কর্মরত।
নার্সের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো হলেও, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটের কারণে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
রোগীদের অভিযোগ ও দুর্ভোগ
উপজেলার নাটিমা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, “কিছুটা জটিল রোগী হলেই চিকিৎসকরা সরাসরি যশোর পাঠিয়ে দেন, কোনো প্রাথমিক চিকিৎসাও দেন না।”
পৌর শহরের বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম বলেন, “হাসপাতালে গেলে ঠিকভাবে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। আমার মেয়েকে নিয়ে গেলে তারা জানায়,
এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়, যশোর নিয়ে যেতে হবে।”
অনেক রোগী নার্সদের দূরব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগও করেন। হাসপাতালের টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী এবং খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেদায়েত বিন মোহাম্মদ সেতু বলেন, “চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংকট রয়েছে।
এসব পদ বছর মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই নতুন নিয়োগ হয়ে যাবে।”
পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কপোতাক্ষ নদ খননের ফলে হাসপাতালের ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে,
ফলে নোংরা পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।”
১৮ কোটি টাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু হয়নি
এদিকে, উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভৈরবাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পন্ন হলেও এখনো সেটি চালু হয়নি।
এতে করে উপজেলার জনগণ আরও একটি সরকারি হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সিভিল সার্জনের প্রতিশ্রুতি
ঝিনাইদহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মিথিলা ইসলাম বলেন, “ডাক্তারের সংকট শুধু মহেশপুর নয়, বরং সারাদেশের সমস্যা।
প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চিকিৎসক ও জনবল সংকট রয়েছে।
আমরা এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। আশা করছি, দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।”
মহেশপুরবাসীর প্রত্যাশা, দ্রুতই জনবল সংকট ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান হবে, যাতে তারা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন।