জীবননগর অফিস :
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে দিনভর অনশন করেছেন কলেজছাত্রী তানিয়া খাতুন (১৭)। দীর্ঘ তিন-চার বছর প্রেমের সম্পর্কের পর প্রেমিক
অনিক (২১) গোপনে তাকে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে স্বীকৃতি না দিয়ে অন্যত্র দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তানিয়ার অনশনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রেম, প্রতিশ্রুতি ও গোপন বিয়ে
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলার শাপলাকলি পাড়ার বাসিন্দা তানিয়া খাতুন ও সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর ঘোষপাড়ার আব্দুল্লাহর ছেলে অনিক দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন।
তানিয়ার অভিযোগ, অনিক তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান এবং বিভিন্ন স্থানে তাকে স্ত্রী পরিচয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর অনিক তাকে বেনীপুর এলাকায় একটি বাড়িতে নিয়ে যান এবং এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে হুজুর পরিচয় দিয়ে তাদের বিয়ে পড়ান।
তবে বয়স কম হওয়ায় তারা সেই বিয়ের আনুষ্ঠানিক রেজিস্ট্রি করতে পারেননি।
বিয়ের পরও অনিক স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যান।
দ্বিতীয় বিয়ে ও তানিয়ার অনশন
তানিয়া জানান, কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন যে, অনিক আন্দুলবাড়ীয়া এলাকায় আরেকটি বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করছেন। এ খবর শুনে তিনি স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনিকের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন।
‘‘আমি স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে গেলে অনিকের বাবা-মা, দাদি ও চাচারা আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অনিক এসময় বাড়ি থেকে পালিয়ে যান,’’ বলেন তানিয়া।
তিনি আরও বলেন, ‘‘পরে তার চাচা আরজুল্লাহ আমাকে আশ্বাস দেন যে, ‘তুমি ফিরে যাও, পরে তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
কিন্তু এখন তারা আমাকেই অস্বীকার করছেন।’’
অনিকের পরিবারের অস্বীকার ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
অনিকের বাবা আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘আমার ছেলে অনিক তানিয়াকে বিয়ে করেছে তা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমরা তাকে বউমা হিসেবে মেনে নেব।’’
তবে স্থানীয়দের দাবি, অনিক যদি বিয়ে না করে থাকে, তাহলে কেন তানিয়া স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবি করছেন? তারা অভিযোগ করেন,
তানিয়ার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় অনিকের পরিবার তাকে মেনে নিতে চায় না এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করছে।
এ বিষয়ে সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি, তবে পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় ঘটনাস্থলে যাইনি।’’
প্রশাসনের অবস্থান ও তানিয়ার আকুতি
জীবননগর থানার ওসি মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘তানিয়া অনিকের বাড়িতে অনশন করেছেন কি না, সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অন্যদিকে, তানিয়া হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা দরিদ্র হওয়ায় অনিকের পরিবার আমাকে বউমা হিসেবে মেনে নিতে চায় না।
এই পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। আমি প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থার সহযোগিতা চাই।’’
ন্যায়বিচারের দাবি
স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, তানিয়ার অভিযোগের যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পায়।
তারা অনিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে এবং কোনো নারী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, তানিয়া কি ন্যায়বিচার পাবেন, নাকি সমাজের অসংগতির শিকার হবেন?