আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কোলঘেঁষে প্রবাহমান কুমার নদ একসময় ছিলো এলাকার প্রাণ।
বর্তমানে সেই নদ রূপ নিয়েছে এক বিশাল বর্জ্যভাণ্ডারে।স্থানীয় হাট-বাজার,ক্লিনিক, হোটেল-রেস্টুরেন্ট এবং গৃহস্থালির প্রতিদিনের আবর্জনা
অবাধে ফেলা হচ্ছে এই নদে, যার ফলে নদের পানি কালো, দুষিত ও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে। অথচ, নদ সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশাসনের তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।
দূষণের উৎস ও প্রকৃতি
স্থানীয় বাজারগুলো থেকে পচা সবজি, পশু-পাখির নাড়িভুঁড়ি, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ নানান প্রকার কঠিন ও জৈব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে কুমার নদে।এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্লিনিকগুলোর বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য,যার স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক থেকে অত্যন্ত বিপজ্জনক। হোটেল ও রেস্টুরেন্টের উচ্ছিষ্ট খাদ্য নদে গিয়ে মিশে এর পরিবেশকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলছে।
প্রতিক্রিয়াশীল স্থানীয় জনতা
স্থানীয় বাসিন্দারা নদের দূষণে চরম ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। একসময় এই নদে গোসল করতেন, মাছ ধরতেন—আজ সেই জলাশয়ের জল এতটাই বিষাক্ত যে তার সংস্পর্শে চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা শুধু নামমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন। তারা মাঠে না গিয়ে কাগজে-কলমে কাজ সারছেন।”
কর্তৃপক্ষের নিরবতা ও অভিযোগ
বিভিন্ন সময় স্থানীয়রা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানালেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
প্রশাসনের এই নির্লিপ্ততা স্থানীয়দের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—কুমার নদকে রক্ষা করার দায়িত্ব কি কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি
পরিবেশবিদদের মতে, এই লাগামহীন দূষণ দীর্ঘমেয়াদে শুধু পরিবেশের জন্য নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
কুমার নদে অব্যাহতভাবে বর্জ্য পড়ে যাওয়ায় মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে, যা নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।
সমাধান ও দাবি
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে কঠোর প্রশাসনিক নজরদারি এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদ সংলগ্ন এলাকায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো,
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিবেশ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
উপসংহার
একসময়কার প্রাণবন্ত কুমার নদ এখন মৃত্যুর মুখে। প্রশাসন যদি এখনই সচেষ্ট না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই নদ রক্ষার আর কোনো উপায় থাকবে না।
নদ রক্ষা শুধু পরিবেশ নয়—জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষারও অঙ্গ। সময় এসেছে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের।