১৪ বছর পর আবার আলোচনায় ঝিনাইদহের নিএনপি নেতা শাহ্জাহান সিরাজ হত্যা মামলা, পুনরুজ্জীবিতের উদ্যোগ পরিবারের

আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-

ঝিনাইদহের  বিএনপি  নেতা  ও সাবেক  ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান সিরাজ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গ আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর তাঁর পরিবার মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩ জুন রাত ১২টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামে শাহ্জাহান সিরাজকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনার দিন তিনি সাগান্না ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাউদ্দিন আল মামুনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন।

গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মানিকগঞ্জে তিনি মারা যান।

নিহতের পরিবার দাবি করছে, শাহ্জাহান সিরাজ মৃত্যুর আগে কিছু সন্দেহভাজনের নাম উল্লেখ করেন, যা ভিত্তি করে তাঁর ভাই আলী হোসেন ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর–১৮২/১১)।

অভিযোগে সানোয়ার, ক্রসফায়ারে নিহত পাকরা জিয়া, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কামাল হোসেন, সাঈদ মুন্সি, মোজাম্মেল হক ও তাঁর ছেলে রিপন, আইয়ুব হোসেন ও হালিম গাজীর সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়।

তবে, মামলার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। বাদী ও সাক্ষীরা একাধিকবার হুমকির মুখে পড়েন এবং তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠে।

পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার না করেই প্রমাণের অভাব দেখিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) জমা দেয়।

২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তাঁর স্বামী বাড়ির সামনে পৌঁছানোর মুহূর্তে ‘কথা আছে’ বলে ডেকে নেওয়ার পরপরই তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

তিনি দাবি করেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাম্মেল হককে নির্বাচনে জেতাতে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

শাহ্জাহান সিরাজের ছেলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, “আমার বাবার হত্যার বিচার হয়নি। মামলাটি রাজনৈতিক প্রভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এখনো চিহ্নিত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে ন্যায়বিচার চাই।”

অন্যদিকে সন্দেহভাজনদের একজন, সাঈদ মুন্সি জানান, তদন্তে প্রমাণ না থাকায় মামলাটি খারিজ হয়েছে এবং তাঁদের আদালতে হাজির হতে হয়নি।

মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এবং বর্তমানে ডিবির পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, পর্যাপ্ত

সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, হত্যার পেছনে স্থানীয় চরমপন্থিদের ইন্ধন থাকতে পারে।

মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি (এপিপি) আলাউদ্দীন আজাদ।

তিনি জানান, আদালতের মাধ্যমে মামলার নথি তলবের আবেদন করা হয়েছে, তবে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সার্টিফায়েড কপি এখনও পাওয়া যায়নি।

বিকল্প আইনি পথেও মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে পরিবার, আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা এখন নতুন করে সোচ্চার হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *