আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাচারীতুলা
গ্রামে খেলাধুলার সময়সাবধানতাবশত নলকূপে মিশে যাওয়া কীটনাশকযুক্ত পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ছয় শিশু।
সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন থাকলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং শঙ্কামুক্ত।
ভর্তি হওয়া শিশুরা হলো—কামিরুল শাহর ছেলে হোসাইন শাহ (৪), সাইফুল শাহর মেয়ে মরিয়ম (৭), সাগর খাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ (৩),
হাসান মন্ডলের মেয়ে জান্নাতুল (৯), রতন শাহর মেয়ে রোকেয়া (৯) ও মারুফ শাহর ছেলে মার্ফিয়া (৬)।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, সোমবার দুপুরে গ্রামের এক কৃষক রমজান মন্ডল নিজের জমিতে ঘাস নিধনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করেন এবং ব্যবহৃত একটি বোতলে অবশিষ্ট কীটনাশক রেখে বিশ্রামের জন্য পাশের আমবাগানে যান।
ভুলবশত তিনি বোতলটি ফেলে বাড়ি ফিরে যান। বিকেলে এলাকার কয়েকটি বাড়ির শিশু খেলতে গিয়ে বোতলটি কুড়িয়ে পায় এবং খেলার ছলে সেটির বিষাক্ত তরল একটি নলকূপে ঢেলে দেয়। এরপর ওই নলকূপের পানি পান করে শিশুরা।
সন্ধ্যার দিকে প্রথমে হোসাইন শাহের পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হলে অভিভাবকরা নলকূপের পাশে পড়ে থাকা কীটনাশকের বোতল দেখতে পান। তৎক্ষণাৎ হোসাইনকে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে একইভাবে বাকি পাঁচ শিশুরও পেট ও গলায় ব্যথা এবং বমি শুরু হলে তাদেরকেও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন শিশুদের মধ্যে হোসাইনের পাকস্থলী ওয়াশ করা হয়।
হোসাইনের মা মমতাজ খাতুন বলেন, “বাচ্চা হঠাৎ পেটব্যথা শুরু হলে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে জানা যায় বিষ খেয়েছে। আল্লাহর রহমতে এখন কিছুটা ভালো।”
অপর এক অভিভাবক মারুফ শাহ বলেন, “মেয়ের পেট ও গলায় প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। বমি করছিল। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখন একটু সুস্থ আছে।”
হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আল-আমিন বলেন,
“প্রথমে একটি শিশু বিষক্রিয়ার উপসর্গ নিয়ে আসে। আমাদের এখানে পাকস্থলী ওয়াশের সুযোগ না থাকায় সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মেহেদী ইসলাম টিটু জানান, “শিশুরা বিষক্রিয়া নিয়ে এসেছে। তাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।”
এদিকে, হরিনাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ রউফ খান বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি দুর্ঘটনাজনিত বলেই মনে হচ্ছে। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এলাকায় শোক ও উদ্বেগের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয়রা অসাবধানতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কীটনাশক ব্যবহারে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।