ঝিনাইদহে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি: জনদুর্ভোগ চরমে, ঠিকাদারের খোঁজ নেই

আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী থেকে কাতলামারী বাজার পর্যন্ত সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।

‘উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি’ নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বর্তমানে এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় এক বছর আগে কাজ শুরুর পর রাস্তার এক পাশ খুঁড়ে রেখে কার্যত উধাও হয়ে গেছেন ঠিকাদার।

সরেজমিন চিত্র

সকাল থেকেই এ সড়ক দিয়ে শত শত মানুষ যাতায়াত করেন।শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কৃষিপণ্য পরিবহনের ভ্যান ও ট্রাকসহ সব ধরনের

যানবাহনের চলাচল বর্তমানে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

সড়কের মাঝখানে ছড়িয়ে থাকা গর্ত ও খোড়া অংশের কারণে প্রায়ই যানবাহন আটকে যাচ্ছে, ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষিকা হাসিনা পারভীন জানান, “প্রতিদিন সন্তানকে স্কুলে পৌঁছাতে গিয়ে ভয়ে থাকি।

রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, একটু অসতর্ক হলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গত সপ্তাহেই এক বৃদ্ধ পড়ে গিয়েছিলেন।”

ভ্যানচালক মন্টু শেখ বলেন, “ভাঙা জায়গায় চাকা আটকে গিয়ে যাত্রীসহ বিপদে পড়ি। মাঝে মাঝে যাত্রীরা পড়ে গিয়ে আহতও হন।”

স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, “সড়কটি আমাদের প্রতিদিনের চলাচলের একমাত্র পথ।

কিন্তু বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যেন যুদ্ধক্ষেত্র পার হচ্ছি।”

ঠিকাদারের অনুপস্থিতি

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের এক পাশ খুঁড়ে কাজ বন্ধ রেখে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম—যিনি ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি—দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্পে অনুপস্থিত।

একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “সরকার উন্নয়নের জন্য বাজেট দেয়, অথচ আমাদের প্রাপ্য হচ্ছে শুধু দুর্ভোগ। কাজ ফেলে ঠিকাদার চলে গেলেও তার কোনো জবাবদিহি নেই।”

প্রশাসনের বক্তব্য

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, কাজ পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ঠিকাদারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে।

তাকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, শিগগিরই কাজ পুনরায় শুরু করবেন। আমরা আশাবাদী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে।”

উপসংহার

সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং ঠিকাদারদের জবাবদিহিহীনতা জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে।

দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ না হলে শুধু ভোগান্তি নয়, জননিরাপত্তার বিষয়েও বড় ঝুঁকি দেখা দেবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রকল্পের গতি ফেরানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *