বিশেষ প্রতিনিধি:-
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সাদেক আলী প্রামানিক জীবনের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
৭৫ বছর বয়সে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে তিনি প্রমাণ করেছেন—শিক্ষা অর্জনের কোনো বয়স নেই।
সাদেক আলীর পরিবার জানায়, প্রথমে তারা ভেবেছিলেন এটি হয়তো তার সাময়িক ইচ্ছা। কিন্তু তার দৃঢ় মনোভাব দেখে পরিবারের সদস্যরা তাকে ভর্তি করিয়ে দেন।
একপর্যায়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।
তিনি বলেন, “আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী ছিলাম। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর পড়াশোনা থেমে যায়।
দীর্ঘদিন পর মনে হলো জীবনে কিছু একটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
তখন সিদ্ধান্ত নিই, আবার পড়াশোনা শুরু করব। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেলেও আমি থেমে থাকিনি।
কষ্ট করে ক্র্যাচে ভর দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি এবং পাস করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ তাআলা কুরআনে পড়াশোনার গুরুত্ব দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, জ্ঞান অর্জনের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই।
যে কেউ, যেকোনো সময় চাইলে শিক্ষার মাধ্যমে নিজের জীবন উন্নত করতে পারে।”
সাদেক আলীর এই সাফল্যে পরিবারের সদস্যরা যেমন আনন্দিত, তেমনি স্থানীয় বিভিন্ন মহল থেকেও এসেছে প্রশংসা ও অভিনন্দন।
নলডাঙ্গার শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জিয়াউল হক জিয়া তার ফেসবুকে লেখেন, “ভাঙা পা নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে ৭৫ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।
দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি আর কঠিন মনোবল থাকলে যে অসম্ভবও সম্ভব, সাদেক আলী তা প্রমাণ করেছেন।”
নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন,
“সাদেক আলীর এই অর্জন আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়।”
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটোর উপ-আঞ্চলিক পরিচালক তানিয়া তালুকদার বলেন, “সাদেক আলীর অদম্য মনোবল ও পরিশ্রম এ
বয়সে তাকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনে সাহায্য করেছে। এটি বাউবির জন্যও একটি গর্বের বিষয়।”
সাদেক আলীর এই সাফল্য বাংলাদেশের শিক্ষা ও সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে
শিক্ষা কখনো থেমে থাকে না, আর মানব ইচ্ছাশক্তিই যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।