বিশেষ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সাধুখালী গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের পৈতৃক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
গ্রামটির একমাত্র হিন্দু পরিবার হিসেবে টিকে থাকা অরুণ বিশ্বাসের পরিবার বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
অরুণ বিশ্বাস বলেন, “বাপ-দাদার ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে এখনও পড়ে আছি। গ্রামের অন্য হিন্দু পরিবারগুলো আগেই চলে গেছে। কিন্তু এখন যেভাবে নির্যাতন চলছে, তাতে আর টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অরুণ বিশ্বাস ও তার পরিবার সাধুখালী গ্রামে পৈতৃক ২৭ শতক জমিতে বহু প্রজন্ম ধরে বসবাস করছেন।
তবে ১৯৮৫ সালে প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তার জমিটির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯০ সালে আদালত আব্দুস সাত্তারের দলিল বাতিল ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে অরুণ বিশ্বাস
আদালতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন এবং ২০২১ সালে আদালত আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে জমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
অভিযোগ রয়েছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত শুক্রবার সকালে আব্দুস সাত্তার ও তার
লোকজন জমিতে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করেন। বাধা দিতে গেলে অরুণ বিশ্বাসের চার ছেলেকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়।
এমনকি এক পর্যায়ে জোরপূর্বক একটি ছোট ঘর নির্মাণও করা হয়।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, “আমি গত ৭০ বছর ধরে এই গ্রামে আছি। এই জমিতে অরুণ বিশ্বাস ও তার পূর্বপুরুষদের বসবাস দেখছি। জোর করে দখলের এই প্রচেষ্টা খুবই দুঃখজনক।”
অরুণ বিশ্বাসের ছেলে ও পল্লী চিকিৎসক অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, “আমরা নিজ জায়গায় ঘর তুলতে পারছি না।
বাবা-মা এখন বাধ্য হয়ে গোয়ালঘরে থাকছেন। আমরা চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
অভিযুক্ত আব্দুস সাত্তারের ছেলে রেজাউল ইসলাম দাবি করেন, “এই জমির বৈধ কাগজ আমাদের কাছে রয়েছে।”
তবে তিনি কোনো দলিল বা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুম খান বলেন, “ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।
অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এই ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং সংখ্যালঘু পরিবারটি নিরাপত্তার জন্য
প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।