আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
মাত্র ১২০ টাকায় ফরম পূরণ করে ঘুষ, তদবির কিংবা কোনো প্রকার অনিয়ম ছাড়াই চাকরি
পেয়েছেন ঝিনাইদহ জেলার ২৫ জন বেকার যুবক ও যুবতী। পুলিশের কনস্টেবল পদে এমন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভিভাবকরা যেমন
আবেগাপ্লুত, তেমনি প্রার্থীদের চোখে মুখেও ছিল আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার অশ্রু।
বুধবার (১৪ মে) রাত ১১টায় ঝিনাইদহ পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এতে দেখা যায়, জেলা পুলিশের তথ্যমতে মোট ১,৭৪১ জন আবেদনকারীর মধ্যে শারীরিক
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২৭৭ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৬৯ জন এবং শেষপর্যায়ে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২৫ জন প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে
নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছেন একজন নারী প্রার্থীও। পাশাপাশি আরও ৫ জনকে রাখা হয়েছে অপেক্ষমাণ তালিকায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন কোটচাঁদপুর উপজেলার জয়দিয়া গ্রামের কৃষক অশোক হালদার।
তিনি বলেন, “আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। কোনো ঘুষ, তদবির ছাড়াই আমার মেয়ে শিমলা হালদার চাকরি পেয়েছে।
আমি নিজ চোখে দেখেছি স্বচ্ছ নিয়োগ কীভাবে হয়। এজন্য ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ এবং পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এদিকে সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের লাল চানের ছেলে আসিক ইকবাল বলেন, “ঘুষ ছাড়া চাকরি হবে এটা কোনোদিন ভাবিনি। নিজের নাম যখন শুনলাম, চোখের পানি ধরে রাখতে
পারিনি। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা আমার মতো একজন তরুণের জন্য এ চাকরি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।”
ফলাফল ঘোষণার পর নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তৈরি হয় এক হৃদয়স্পর্শী আবহ। উপস্থিত অভিভাবকদের মুখে ছিল সন্তোষ ও গর্বের ছাপ।
অনেক প্রার্থী জানান, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর এই চাকরি তাদের জীবনে আশার আলো হয়ে এসেছে।
পরিবারেও ফিরে এসেছে স্বস্তি আর আনন্দ। তারা প্রতিজ্ঞা করেন, দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করে মানবিক পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবেন।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. মনজুর মোরশেদ বলেন, “শারীরিক সক্ষমতা, মেধা ও দক্ষতার
ভিত্তিতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ধরনের ঘুষ, তদবির বা
রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই যোগ্য প্রার্থীদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের উদ্দেশে পুলিশ সুপার আরও বলেন, “সততা, নিষ্ঠা ও মানবিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে বাংলাদেশ পুলিশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে হবে।”
এ ধরনের স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।