মহেশপুর দত্তনগর কৃষি খামারে অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগে বিতর্কে যুগ্ম-পরিচালক কামরুজ্জামান 

আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর কৃষি খামারে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএডিসির যুগ্ম-

পরিচালক কে এম কামরুজ্জামান শাহিনের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়া, রাজনৈতিক পক্ষপাত,

ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থনৈতিক দুর্নীতিসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তিনি তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন।

বিএডিসির খাস জমিতে দোকান নির্মাণের অনুমতি

জানা গেছে, দত্তনগর কৃষি খামারের বিএডিসির আওতাধীন প্রায় ২,৭৩৭ একর জমির মধ্যে প্রায় এক একর জমিতে দোকানঘর ও লেদ কারখানা

গড়ে উঠেছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঘর নির্মাণের বিনিময়ে যুগ্ম-পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক

সুবিধা নিয়েছেন। বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল হালিমসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন

আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতপন্থী ব্যক্তি এই জমি দখলে রেখে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং কর্মী নিপীড়নের অভিযোগ:_

স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে কে এম কামরুজ্জামান শাহিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করেছেন।

নৌকায় ভোট না দিলে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনের পর নিজ গ্রামে খাসি জবাই করে উৎসব করার তথ্যও পাওয়া গেছে।

শ্রমিকদের প্রতি অনৈতিক আচরণ:-

খামারের একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, খামারের নিকটবর্তী নিজ গ্রামের শ্রমিকদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করেন তিনি।

কেউ তাকে সালাম না দিলে বা তার মতের বিরুদ্ধে কিছু বললে, পরদিনই চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভোগেন।

এতে খামারে কাজ করা দিনমজুর ও নিম্নপদস্থ কর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি ও টেন্ডারে অনিয়ম:-

খামারে ব্যবহৃত সার, বীজ ও কীটনাশক ক্রয়ের ক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের

অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, নিজ ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে দরপত্র প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছেন তিনি,

যদিও হেড অফিস অনেক সময় তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ধান টেন্ডার বাবদ অর্থবছরের বকেয়া টাকাও এখনও পরিশোধ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

প্রতিবাদকারীদের দমন:-

বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কর্মীদের ওপর দমনমূলক আচরণেরও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, বিএনপি বা জামায়াতপন্থী শ্রমিক হলে ৬০ বছর পূর্ণ হলেই চাকরিচ্যুতি ঘটানো হয়, কিন্তু আওয়ামী ঘরানার হলে বয়সের তোয়াক্কা করা হয় না।

বিএডিসি হেড অফিসের প্রতিক্রিয়া

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে, বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামার বিভাগের ব্যবস্থাপক মোঃ রুহুল আমিন বলেন,“আমি বিষয়টি প্রথমবার

শুনলাম। অবশ্যই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

যোগাযোগে অনীহা

এ বিষয়ে কে এম কামরুজ্জামান শাহিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সরকারি একটি গুরুত্বপূর্ণ খামারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা এমন গুরুতর অভিযোগ প্রশাসনিক নজরদারির প্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ

করিয়ে দেয়। স্থানীয় জনগণের দাবি, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া

হোক যাতে সরকারি সম্পদ ও কর্মপরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *